পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুনিভার্সিটি বিল্।
১১৫

 সে কথা ঠিক। ভারতবর্ষের য়ুনিভার্সিটি দেশের প্রকৃতির সঙ্গে যে মিশিয়া গেছে, আমাদের সমাজের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাঙ্গ হইয়া গেছে, তাহা বলিতে পারি না―এখনো ইহা আমাদের বাহিরে রহিয়াছে।

 কিন্তু ইহাকে আমরা ক্রমশ আয়ত্ত করিয়া লইতেছি—আমাদের স্বদেশীদের পরিচালিত কলেজগুলিই তাহার প্রমাণ।

 ইংরাজের কাছ হইতে আমরা কি পাইয়াছি, তাহা দেখিতে হইলে কেবল দেশে কি আছে তাহা দেখিলে চলিবে না, দেশের লোকের হাতে কি আছে, তাহাই দেখিতে হইবে।

 রেলোয়ে, টেলিগ্রাফ, অনেক দেখিতেছি, কিন্তু তাহা আমাদের নহে—বাণিজ্য-ব্যবসায়ও কম নহে, কিন্তু তাহারো যৎসামান্য আমাদের! রাজ্যশাসনপ্রণালী জটিল ও বিস্তৃত, কিন্তু তাহার যথার্থ কর্তৃত্বভার আমাদের নাই বলিলেই হয়, তাহার মজুরের কার্য্যই আমরা করিতেছি, তাহাও উত্তরোত্তর সঙ্কুচিত হইয়া আসিবার লক্ষণ দেখা যাইতেছে।

 যে জিনিষ যথার্থ আমাদের, তাহা কম ভাল হইলেও, তাহার ত্রুটি থাকিলেও, তাহা ভাণ্ডারকর-মহাশয়ের সম্পূর্ণ মনোনীত না হইলেও তাহাকেই আমরা লাভ বলিয়া গণ্য করিব।

 যে বিদ্যা পুঁথিগত,—যাহার প্রয়োগ জানা নাই, তাহা যেমন পণ্ড, তেম্‌নি যে শিক্ষাদানপ্রণালী আমাদের আয়ত্তের অতীত, তাহাও আমাদের পক্ষে প্রায় তেম্‌নি নিষ্ফল। দেশের বিদ্যাশিক্ষাদান দেশের লোকের হাতে আসিতেছিল, বস্তুত ইহাই বিদ্যাশিক্ষার ফল। সেও যদি সম্পূর্ণ গবর্মেণ্টের হাতে গিয়া পড়ে, তবে খুব ভাল য়ুনিভার্সিটিও আমাদের পক্ষে দারিদ্র্যের লক্ষণ।

 আমাদের দেশে বিদ্যাকে অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য করা কোনোমতেই সঙ্গত নহে। আমাদের সমাজ শিক্ষাকে সুলভ করিয়া রাখিয়াছিল— দেশের উচ্চনীচ সকল স্তরেই শিক্ষা নানা সহজ প্রণালীতে প্রবাহিত