পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুনিভার্সিটি বিল্।
১১৭

আমোদ মোটের উপরে সকলে ভাগাভাগি করিয়া লইয়াছে। ধনীর চণ্ডীমণ্ডপে যে পাঠশালা বসিয়াছে, গরীবের ছেলেরা বিনা বেতনে তাহাতে শিক্ষা পাইয়াছে—রাজার সভায় যে উৎসব হইয়াছে, দরিদ্র প্রজ। বিনা আহ্বানে তাহাতে প্রবেশলাভ করিয়াছে। ধনীর বাগানে দরিদ্র প্রত্যহ পূজার ফুল তুলিয়াছে,—কেহ তাহাকে পুলিসে দেয় নাই, সম্পন্ন ব্যক্তি দীঘি-ঝিল কাটাইয়া তাহার চারদিকে পাহারা বসাইয়া রাখে নাই। ইহাতে দরিদ্রের আত্মসম্ভ্রম ছিল—ধনীর ঐশ্বর্য্যে তাহার স্বাভাবিক দাবী ছিল, এইজন্য, তাহার অবস্থা যেমনই হৌক, সে পাশবতা প্রাপ্ত হয় নাই—যাঁহারা জাতিভেদ ও মনুষ্যত্বের উচ্চ অধিকার লইয়া মুখস্থ বুলি আওড়ান্, তাঁহারা এ সব কথা ভাল করিয়া চিন্তা করিয়া দেখেন না।

 বিলাতী লাট্ আজকাল বলিতেছেন, যাহার টাকা নাই, ক্ষমতা নাই, তাহার বিদ্যাশিক্ষার প্রতি অত্যন্ত লোভ করিবার দরকার কি? আমাদের কানে এ কথাটা অত্যন্ত বিদেশী, অত্যন্ত নিষ্ঠুর বলিয়া ঠেকে।

 কিন্তু সমস্ত সহিতে হইবে। তাই বলিয়া বসিয়া বসিয়া আক্ষেপ করিলে চলিবে না।

 আমরা নিজেরা যাহা করিতে পারি, তাহারই জন্য আমাদিগকে কোমর বাঁধিতে হইবে। বিদ্যাশিক্ষার ব্যবস্থা আমাদের দেশে সমাজের ব্যবস্থা ছিল—রাজার উপরে, বাহিরে সাহায্যের উপরে ইহার নির্ভর ছিল না—সমাজ ইহাকে রক্ষা করিয়াছে এবং সমাজকে ইহা রক্ষা করিয়াছে।

 এখন বিদ্যাশিক্ষা রাজার কাজ পাইবার সহায়স্বরূপ হইয়াছে, তখন বিদ্যাশিক্ষা সমাজের হিতসাধনের উপযোগী ছিল। এখন সমাজের সহিত বিদ্যার পরস্পর সহায়তার যোগ নাই। ইহাতে এতকাল পরে শিক্ষাসাধনব্যাপার ভারতবর্ষে রাজার প্রসাদঅপেক্ষী হইয়াছে।

 এ অবস্থায় রাজা যদি মনে করেন, তাঁহাদের রাজপলিসির অনুকূল