পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
আত্মশক্তি।

গুপ্তচরের কাজ করিতেছি, মাতৃভূমির বিরুদ্ধে হাত তুলিতেছি এবং যে মনিব আমাদের প্রতি অশ্রদ্ধা করে, তাহার পৌরুষক্ষয়কর অপমানজনক আদেশও প্রফুল্লমুখে পালন করিতেছি—এই চাকরী আরো বিস্তার করিতে হইবে? দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করিতে হইবে? আমরা যদি স্বদেশের কর্ম্মভার নিজে গ্রহণ করিতাম, তবে গবর্মেণ্টের আপিস রাক্ষসের মত আমাদের দেশের শিক্ষিত-লোকদিগকে কি এমন নিঃশেষে গ্রাস করিত? আবেদনের দ্বারা সরকারের চাকরী নহে, পৌরুষের দ্বারা স্বদেশের কর্ম্মক্ষেত্র বিস্তার করিতে হইবে! যাহাতে আমাদের ডাক্তার, আামাদের শিক্ষক, আমাদের এঞ্জিনিয়ারগণ দেশের অধীন থাকিয়া দেশের কাজেই আপনার যেগ্যেতার স্ফূর্ত্তিসাধন করিতে পারেন, আমাদিগকে তাহার ব্যবস্থা করিতেই হইবে। নতুবা আমাদের যে কি শক্তি আছে, তাহার পরিচয়ই আমরা পাইব না। তা ছাড়া, এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে যে, সেবার অভ্যাসের দ্বারাই প্রীতির উপচয় হয়; যদি আমরা শিক্ষিতগণ এমন কোথাও কাজ করিতাম, যেখানে দেশের কাজ করিতেছি, এই ধারণা সর্ব্বদা স্পষ্টরূপে জাগ্রত থাকিত, তবে দেশকে ভালবাস, এ কথা নীতিশাস্ত্রের সাহায্যে উপদেশ দিতে হইত না। তবে, একদিকে যোগ্যতার অভিমান করা, অন্যদিকে প্রত্যেক অভাবের জন্য পরের সাহায্যের প্রার্থী হওয়া— এমনতর অদ্ভুত অশ্রদ্ধাকর আচরণে আমাদিগকে প্রবৃত্ত হইতে হইত না, দেশের শিক্ষা স্বাধীন হইত এবং শিক্ষিতসমাজের শক্তি বন্ধনমুক্ত হইত।

 জর্জ্জিয়গণ, আর্ম্মাণিগণ প্রবল জাতি নহে—ইহারা যে সকল কাজ প্রতিকূল অবস্থাতেও নিজে করিতেছে, আমরা কি সেই সকল কাজেরই জন্য দরবার করিতে দৌড়াই না? কৃষিতত্ত্ব-পারদর্শীদের লইয়া আমরাও কি আমাদের দেশের কৃষির উন্নতিতে প্রবৃত্ত হইতে পারিতাম না?