পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্রতধারণ।
১৫৩

কোন্‌দিকে আমাদের অসম্মান, ও প্রতিকূলতা, আজ দৈবকৃপায় যদি তাহা আমাদের ধারণা হইয়া থাকে, তবে কেবল তাহাকে ক্ষীণ ধারণার মধ্যে রাখিয়া দিলে চলিবে না। কারণ, শুদ্ধমাত্র ইহাকে মনের মধ্যে রাখিলে ক্রমে ইহা কেবল কথার কথা এবং অবশেষে একদিন ইহা বিস্মৃত ও তিরোহিত হইয়া যাইবে। ইহাকে চিরদিনের মত আমাদিগকে মনে গাঁথিতে এবং কাজে খাটাইতে হইবে। ইহাকে ভুলিলে আমাদের কোনোমতেই চলিবে না— তাহা হইলে আমরা মরিব।

 কাজে খাটাইতে হইবে। কিন্তু আমরা স্ত্রীলোক—পুরুষের মত আমাদের কার্য্যক্ষেত্র বাহিরে বিস্তৃত নহে। জানি না, আজিকার দুর্দ্দিনে আমাদের পুরুষেরা কি কাজ করিতে উদ্যত হইয়াছেন? জানি না, এখনো তাঁহারা যথার্থ মনের সঙ্গে বলিতে পারিয়াছেন কি না যে—

“আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু, হায়,
তাই ভাবি মনে!”

 যে নির্জ্জীব, যে সহজ পথ খুঁজিয়া আপনাকে ভুলাইয়া রাখিতেই চায়, তাহাকে ভুলাইবার জন্য আশাকে অধিক-বেশি ছলনা বিস্তার করিতে হয় না। সে হয়ত এখনো মনে করিতেছে, যদি এখানকার রাজদ্বার হইতে ভিক্ষুককে তাড়া খাইতে হয়, তবে ভিক্ষার ঝুলি ঘাড়ে করিয়া সমুদ্রপারে যাইতে হইবে। সমুদ্রের এ পারেই কি, আর ও-পারেই কি, অনন্যশরণ কাঙাল সেই একই চরণ আশ্রয় করিয়াছে।

 কি এ দশা আমাদের পুরুষদের মধ্যে সকলের নহে—তাঁহাদের বহুদিনের বিশ্বাসক্ষেত্রে ভূমিকম্প উপস্থিত হইয়াছে, তাঁহাদের ভক্তি টলিয়াছে, তাঁহাদের আশা খিলানে-খিলানে ফার্টিয়া ফাঁক হইয়া গেছে—এখন তাঁহারা ভাবিতেছেন, ইহার চেয়ে নিজের দীনহীন কুটীর আশ্রয় করাও নিরাপদ্। এখন তাই সমস্ত দেশের মধ্যে নিজের