পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্রতধারণ।
১৫৫

হইবে; কিন্তু যদি শিক্ষা ও অভ্যাসক্রমে আমাদের সেইরূপই ধারণা হয়, তবে এই কথা বলিব, সৌন্দর্য্যবোধকেই সকলের চেয়ে বড় করিবার দিন আজ নহে—সন্তান যখন দীর্ঘকাল রোগশয্যায় শায়িত, তখন জননী বেনারসি শাড়ীখানা বেচিয়া তাহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে কুণ্ঠিত হন না—তখন কোথায় থাকে সৌন্দর্য্যবোধের দাবী?

 জানি, আমাকে অনেকে বলিবেন, কথাটা বলিতে যত সহজ, করিতে তত সহজ নহে। আমাদের অভ্যাস, আমাদের সংস্কার, আমাদের আরামস্পৃহা, আমাদের সৌন্দর্য্যবোধ—ইহাদিগকে ঠেলিয়ানড়ানো বড় কম কথা নহে।

 নিশ্চয়ই তাহা নহে। ইহা সহজ নহে, ইহার চেয়ে একদিনের মত চাঁদার খাতায় সহি দেওয়া সহজ। কিন্তু বড় কাজ সহজে হয় না। যখন সময় আসে, তখন ধর্ম্মের শঙ্খ বাজিয়া উঠে, তখন, যাহা কঠিন তাহাকেই বরণ করিয়া লইতে হয়। বস্তুত তাহাতেই আনন্দ, সহজ নহে বলিয়াই আনন্দ, দুঃসাধ্য বলিয়াই সুখ।

 আমরা ইতিহাসে পড়িয়াছি, যুদ্ধের সময় রাজপুতমহিলারা অঙ্গের ভূষণ, মাথার কেশ দান করিয়াছে, তখন সুবিধা বা সৌন্দর্য্যচর্চ্চার কথা ভাবে নাই—ইহা হইতে আমরা এই শিখিয়াছি যে, জগতে স্ত্রীলোক যদি বা যুদ্ধ না করিয়া থাকে, ত্যাগ করিয়াছে—সময় উপস্থিত হইলে ভূষণ হইতে প্রাণ পর্য্যন্ত ত্যাগ করিতে কুণ্ঠিত হয় নাই। কর্ম্মের বীর্য্য অপেক্ষা ত্যাগের বীর্য্য কোনো অংশেই ন্যূন নহে। ইহা যখন ভাবি, তখন মনে এই গৌরব জন্মে যে, এই বিচিত্রশক্তিচালিত সংসারে স্ত্রীলোককে লজ্জিত হইতে হয় নাই—স্ত্রীলোক কেবল সৌন্দর্য্যদ্বারা মনোহরণ করে নাই, ত্যাগের দ্বারা শক্তি দেখাইয়াছে।

 আজ আমাদের বঙ্গদেশ রাজশক্তির নির্দ্দয় আঘাতে বিক্ষত হইয়াছে, আজ বঙ্গরমণীদের ত্যাগের দিন। আজ আমরা ব্রতগ্রহণ