পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশীয় রাজ্য।
১৬১

সার্কাসের খেলোয়াড় যেরূপ অক্লান্ত সাধনা ও অধ্যবসায়ের দ্বারা নিজের ব্যবসায়ে উৎকর্ষলাভ করিয়াছে, সেইরূপ উদ্যম ও উদ্যোগের অভাবে অধ্যাপক যদি নিজের কর্ম্মে উন্নতিলাভ না করিয়া থাকেন, তবেই তাঁহাকে লজ্জা দেওয়া চলে।

 য়ুরোপের সঙ্গে ভারতের পার্থক্য অনুভব করিয়া যদি আমাদের লজ্জা পাইতে হয়, তবে লজ্জার কারণটা ভাল করিয়া বিচার করিতে হয়, নতুবা যথার্থ লজ্জার মূল কখনই উৎপাটিত হইবে না। যদি বলি যে, ইংলণ্ডের পার্লামেণ্ট আছে, ইংলণ্ডের যৌথকারবার আছে, ইংলণ্ডে প্রায় প্রত্যেক লোকই রাষ্ট্রচালনায় কিছু-না-কিছু অধিকারী, এইজন্য তাহারা বড়, সেইগুলি নাই বলিয়াই আমরা ছোট, তবে গোড়ার কথাটা বলা হয় না। আমরা কোনো কৌতুকপ্রিয় দেবতার বরে যদি কয়েকদিনের জন্য মূঢ় আবুহোসেনের মত ইংরেজিমাহাত্ম্যের বাহ্য অধিকারী হই—আমাদের বন্দরে বাণিজ্যতরীর আবির্ভাব হয়— পার্লামেণ্টের গৃহচূড়া আকাশভেদ করিয়া উঠে, তবে প্রথম অঙ্কের প্রহসন পঞ্চম অঙ্কে কি মর্ম্মভেদী অশ্রুপাতেই অবসিত হয়! আমরা এ কথা যেন কোনোমতেই না মনে করি যে, পার্লামেণ্টে মানুষ গড়ে—বস্তুত মানুষই পার্লামেণ্ট গড়ে। মাটি সর্ব্বত্রই সমান; সেই মাটি লইয়া কেহ বা শিব গড়ে, কেহ বা বানর গড়ে; যদি কিছু পরিবর্ত্তন করিতে হয়, তবে মাটির, পরিবর্ত্তন নহে, যে ব্যক্তি গড়ে, তাহার শিক্ষা ও সাধনা, চেষ্টা ও চিন্তার পরিবর্ত্তন করিতে হইবে।

 এই ত্রিপুররাজ্যের রাজচিহ্ণের মধ্যে একটি সংস্কৃতবাক্য অঙ্কিত দেখিয়াছি—“কিল বিদুর্বীরতাং সারমেকং”—বীর্য্যকেই সার বলিয়া জানিবে। এই কথাটি সম্পূর্ণ সত্য। পার্লামেণ্ট সার নহে, বাণিজ্যতরী সার নহে, বীর্য্যই সার। এই বীর্য্য দেশকালপাত্রভেদে নানা আকারে প্রকাশিত হয়—কেহ বা শস্ত্রে বীর, কেহ বা শাস্ত্রে বীর, কেহ বা ত্যাগে