পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশীয় রাজ্য
১৬৫

 ভারতবর্ষের দেশীয় রাজ্যগুলির যথার্থ উপযোগিতা কি, তাহা এইবার বলিবার সময় উপস্থিত হইল।

 দেশবিদেশের লোক বলিতেছে, ভারতবর্ষের দেশীয় রাজ্যগুলি পিছাইয়া পড়িতেছে। জগতের উন্নতির যাত্রাপথে পিছাইয়া পড়া ভাল নহে, এ কথা সকলেই স্বীকার করিবে, কিন্তু অগ্রসর হইবার সকল উপায়ই সমান মঙ্গলকর নহে। নিজের শক্তির দ্বারাই অগ্রসর হওয়াই যথার্থ অগ্রসর হওয়া— তাহাতে যদি মন্দগতিতে যাওয়া যায়, তবে সেও ভাল। অপর ব্যক্তির কোলে-পিঠে চড়িয়া অগ্রসর হওয়ার কোনো মাহাত্ম্য নাই— কারণ, চলিবার শক্তিলাভই যথার্থ লাভ, অগ্রসর হওয়ামাত্রই লাভ নহে। ব্রিটিশরাজ্যে আমরা যেটুকু অগ্রসর হইতে পারিয়াছি, তাহাতে আমাদের কৃতকার্য্যতা কতটুকু! সেখানকার শাসনরক্ষণ-বিধিব্যবস্থা যত ভালই হউক্ না কেন, তাহা ত বস্তুত আমাদের নহে। মানুষ ভুলত্রুটিক্ষতিক্লেশের মধ্য দিয়াই পূর্ণতার পথে অগ্রসর হয়। কিন্তু আমাদিগকে ভুল করিতে দিবার ধৈর্য্য যে ব্রিটিশরাজের নাই। সুতরাং তাঁহারা আমাদিগকে ভিক্ষা দিতে পারেন, শিক্ষা দিতে পারেন না। তাঁহাদের নিজের যাহা আছে, তাহার সুবিধা আমাদিগকে দিতে পারেন, কিন্তু তাহার স্বত্ব দিতে পারেন না। মনে করা যাক্, কলিকাতা-ম্যুনিসিপালিটির পূর্ব্ববর্ত্তী কমিশনারগণ পৌরকার্য্যে স্বাধীনতা পাইয়া যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখাইতে পারেন নাই, সেই অপরাধে অধীর হইয়া কর্ত্তৃপক্ষ তাঁহাদের স্বাধীনতা হরণ করিলেন। হইতে পারে, এখন কলিকাতার পৌরকার্য্য পূর্ব্বের চেয়ে ভালই চলিতেছে, কিন্তু এরূপ ভাল চলাই যে সর্ব্বাপেক্ষা ভাল, তাহা বলিতে পারি না। আমাদের নিজের শক্তিতে ইহা অপেক্ষা খারাপ চলাও আমাদের পক্ষে ইহার চেয়ে ভাল। আমরা গরীব এবং নানা বিষয়েই অক্ষম আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্য্য ধনি-জ্ঞানী বিলাতের বিশ্ব-