পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বদেশী সমাজ।
৩১

চমৎকারিত্বের সঙ্গে যুদ্ধকে মিশাইয়া প্রাচ্য-প্রতীচ্য উভয়েরই কাছে ধন্য হইয়াছেন!

 যাহা হউক্, এইরূপই আমাদের প্রকৃতি। প্রয়োজনের সম্বন্ধকে আমরা হৃদয়ের সম্বন্ধদ্বারা শোধন করিয়া লইয়া তবেই ব্যবহার করিতে পারি। সুতরাং অনাবশ্যক দায়িত্বও আমাদিগকে গ্রহণ করিতে হয়। প্রয়োজনের সম্বন্ধ সঙ্কীর্ণ;—আপিসের মধ্যেই তাহার শেষ। প্রভুভৃত্যের মধ্যে যদি কেবল প্রভুভৃত্যের সম্বন্ধটুকুই থাকে, তবে কাজ আদায় এবং বেতনদানের মধ্যেই সমস্ত চুকিয়া যায়, কিন্তু তাহার মধ্যে কোনোপ্রকার আত্মীয়সম্বন্ধ স্বীকার করিলেই দায়িত্বকে পুত্রকন্যার বিবাহ এবং শ্রাদ্ধশান্তি পর্য্যন্ত টানিয়া লইয়া যাইতে হয়।

 আমার কথার আর-একটা আধুনিক দৃষ্টান্ত দেখুন। আমি রাজশাহী ও ঢাকার প্রোভিন‍্শ্যাল কন‍্ফারেন্সে উপস্থিত ছিলাম। এই কন্ফারেন্স-ব্যাপারকে আমরা একটা গুরুতর কাজের বলিয়া মনে করি, সন্দেহ নাই—কিন্তু আশ্চর্য্য এই দেখিলাম, ইহার মধ্যে কাজের গরজের চেয়ে অতিথিসৎকারের ভাবটাই সুপরিস্ফুট। যেন বরযাত্রীদল গিয়াছি—আহার-বিহার-আরাম-আমোদের জন্য দাবী ও উপদ্রব এতই অতিরিক্ত যে, তাহা আহ্বানকর্ত্তাদের পক্ষে প্রায় প্রাণান্তকর। যদি তাঁহারা বলিতেন, তোমরা নিজের দেশের কাজ করিতে আসিয়াছ, আমাদের মাথা কিনিতে আস নাই——এত চর্ব্বচোষ্যলেহ্যপেয়, এত শয়নাসন, এত লেমনেড্-সোডাওয়াটার-গাড়িঘোড়া, এত রসদের দায় আমাদের ‘পরে কেন—তবে কথটা অন্যায় হইত না। কিন্তু কাজের দোহাই দিয়া ফাঁকায় থাকাটা আমাদের জাতের লোকের কর্ম্ম নয়। আমরা শিক্ষার চোটে যত ভয়ঙ্কর কেজো হইয়া উঠি না কেন, তবু আহ্বানকারীকে কাজের উপরে উঠিতে হইবে। কাজকেও আমরা হৃদয়ের সম্পর্ক হইতে