পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
আত্মশক্তি।

বঞ্চিত করিতে চাই না। বস্তুত কনফারেন্সে কেজো অংশ আমাদের চিত্তকে তেমন করিয়া আকর্ষণ করে নাই,—আতিথ্য যেমন করিয়াছিল। কন্ফারেন্স্ তাহার বিলাতি অঙ্গ হইতে এই দেশী হৃদয়টুকুকে একেবারে বাদ দিতে পারে নাই। আহ্বানকারিগণ আহূতবর্গকে অতিথিভাবে, আত্মীয়ভাবে সংবর্দ্ধনা করাকে আপনাদের দায় বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের পরিশ্রম, কষ্ট, অর্থবায় যে কি-পরিমাণে বাড়িয়া উঠিয়াছিল, তাহা যাহারা দেখিয়াছেন, তাঁহারাই বুঝিবেন। কন‍্গ্রেসের মধ্যেও যে অংশ আতিথ্য, সেই অংশই ভারতবর্ষীয় এবং সেই অংশই দেশের মধ্যে পূরা কাজ করে—যে অংশ কেজো, তিনদিনমাত্র তাহার কাজ, বাকি বৎসরটা তাহার সাড়াই পাওয়া যায় না। অতিথির প্রতি যে সেবার সম্বন্ধ বিশেষরূপে ভারতবর্ষের প্রকৃতিগত, তাহাকে বৃহৎভাবে অনুশীলনের উপলক্ষ্য ঘটিলে ভারতবর্ষের একটা বৃহৎ আনন্দের কারণ হয়। যে আতিথ্য গৃহে গৃহে আচরিত হয়, তাহাকে বৃহৎ-পরিতৃপ্তি দিবার জন্য পুরাকালে বড় বড় যজ্ঞানুষ্ঠান হইত— এখন বহুদিন হইতে সে সমস্ত লুপ্ত হইয়াছে। কিন্তু ভারতবর্ষ তাহা ভোলে নাই বলিয়া যেই দেশের কাজের একটা উপলক্ষ্য অবলম্বন করিয়া জনসমাগম হইল, অমনি ভারতলক্ষ্মী তাঁহার বহুদিনের অব্যবহৃত পুরাতন সাধারণ-অতিথিশালার দ্বার উদ্ঘাটন করিয়া দিলেন, তাঁহার যজ্ঞভাণ্ডারের মাঝখানে তাঁহার চিরদিনের আসনটি গ্রহণ করিলেন। এম্‌নি করিয়া কন্‌গ্রেস্-কন্ফারেন্সের মাঝথানে খুব যখন বিলাতী বক্তৃতার ধুম ও চট্‌পটা করতালি—সেখানেও সেই ঘোরতর সভাস্থলেও আমাদের যিনি মাতা, তিনি স্মিতঃমুখ তাঁহার একটুখানি ঘরের সামগ্রী, তাঁহার স্বহস্তরচিত একটুখানি মিষ্টান্ন, সকলকে ভাঙিয়া, বাঁটিয়া, খাওয়াইয়া চলিয়া যান, আর যে কি করা হইতেছে, তাহা তিনি ভাল বুঝিতেই পারেন না।