পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বদেশী সমাজ।
৩৫

দেশকে অন্তরে বাহিরে সম্পুর্ণভাবে পরের হাতে তুলিয়া দিবার চেষ্টাকেই বলে দেশহিতৈষিতা? ইহা কদাচই হইতে পারে না! ইহা কখনই চিরদিন এদেশে প্রশ্রয় পাইবে না—কারণ, ইহা ভারতবর্ষের ধর্ম্ম নহে! আমরা আমাদের অতি দুরসম্পর্কীয় নিঃস্ব আত্মীয়দিগকেও পরের ভিক্ষার প্রত্যাশী করিয়া দূরে রাখি নাই—তাহাদিগকেও নিজের সন্তানদের সহিত সমান স্থান দিয়াছি; আমাদের বহুকষ্ট-অর্জিত অন্নও বহুদুর কুটুম্বদের সহিত ভাগ করিয়া খাওয়াকে আমরা একদিনের জন্য ও অসামান্য ব্যাপার বলিয়া কল্পনা করি নাই— আর আমরা বলিব, আমাদের জননী জন্মভূমির ভার আমরা বহন করিতে পারিব না? বিদেশী চিরদিন আমাদের স্বদেশকে অন্নজল ও বিদ্যা ভিক্ষা দিবে, আমাদের কর্ত্তব্য কেবল এই যে, ভিক্ষার অংশ মনের মত না হইলেই আমরা চীৎকার করিতে থাকিব? কদাচ নহে—কদাচ নহে! স্বদেশের ভার আমরা প্রত্যেকে এবং প্রতিদিনই গ্রহণ করিব—তাহাতে আমাদের গৌরব, আমাদের ধর্ম্ম! এইবার সময় আসিয়াছে,—যখন আমাদের সমাজ একটি সুবৃহৎ স্বদেশী সমাজ হইয়া উঠিবে। সময় আসিয়াছে, —যখন প্রত্যেকে জানিবে আমি একক নহি,—আমি ক্ষুদ্র হইলেও আমাকে কেহ ত্যাগ করিতে পারিবে না এবং ক্ষুদ্রতমকেও আমি ত্যাগ করিতে পারিব না!

 তর্ক এই উঠিতে পারে যে, ব্যক্তিগত হৃদয়ের সম্বন্ধদ্বারা খুব বড় জায়গা ব্যাপ্ত করা সম্ভবপর হইতে পারে না। একটা ছোট পল্লীকেই আমরা প্রত্যক্ষভাবে আপনার করিয়া লইয়া তাহার সমস্ত দায়িত্ব স্বীকার করিতে পারি—কিন্তু পরিধি বিস্তীর্ণ করিলেই কলের দরকার হয়— দেশকে আমরা কখনই পল্লীর মত করিয়া দেখিতে পারি না— এই জন্য অব্যবহিতভাবে দেশের কাজ করা যায় না—কলের সাহায্যে করিতে হয়। এই কল-জিনিষটা আমাদের ছিল না, সুতরাং ইহা বিদেশ হইতে