পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
আত্মশক্তি।

অপেক্ষা করে। যে শক্তি আপাতত যোগ্যলোকের অভাবে কাজে লাগিল না, সে শক্তি যদি সমাজে কোথাও রক্ষিত হইবার স্থানও না পায়, তবে সে সমাজ ফুটা-কলসের মত শূন্য হইয়া যায়। আমি যে সমাজপতির কথা বলিতেছি, তিনি সকল সময়ে যোগ্যলোক না হইলেও সমাজের শক্তি—সমাজের আত্মচেতনা তাঁহাকে অবলম্বন করিয়া বিধৃত হইয়া থাকিবে। অবশেষে বিধাতার আশীর্ব্বাদে এই শক্তিসঞ্চয়ের সঙ্গে যখন যোগ্যতার যোগ হইবে, তখন দেশের মঙ্গল দেখিতে দেখিতে আশ্চর্যবলে আপনাকে সর্ব্বত্র বিস্তীর্ণ করিবে। আমরা ক্ষুদ্র দোকানীর মত সমস্ত লাভলোকসানের হিসাব হাতে হাতে দেখিতে চাই—কিন্তু বড় ব্যাপারের হিসাব তেমন করিয়া মেলে না। দেশে একএকটা বড়দিন আসে, সেইদিন বড়লোকের তলবে দেশের সমস্ত শালতামামি নিকাস বড়খাতার প্রস্তুত হইয়া দেখা দেয়। রাজচক্রবর্ত্তী অশোকের সময়ে একবার বৌদ্ধসমাজের হিসাব তৈরি হইয়াছিল। আপাতত আমাদের কাজ—দপ্তর তৈরি রাথা, কাজ চালাইতে থাকা; যেদিন মহাপুরুষ হিসাব তলব করিবেন, সেদিন অপ্রস্তুত হইয়া শির নত করিব না— দেখাইতে পারিব, জমার ঘরে একেবারে শূন্য নাই।

 সমাজের সকলের চেয়ে যাঁহাকে বড় করিব, এত বড় লোক চাহিলেই পাওয়া যায় না। বস্তুত রাজা তাঁহার সকল প্রজারই চেয়ে যে স্বভাবত বড়, তাহা নহে। কিন্তু রাজ্যই রাজাকে বড় করে। জাপানের নিকাডো জাপানের সমস্ত সুধী, সমস্ত সাধক, সমস্ত শূরবীরদের দ্বারাই বড়। আমাদের সমাজপতিও সমাজের মহত্ত্বেই মহৎ হইতে থাকিবেন। সমাজের সমস্ত বড় লোকই তাঁহাকে বড় করিয়া তুলিবে। মন্দিরের মাথায় যে স্বর্ণকলস থাকে, তাহা নিজে উচ্চ নহে—মন্দিরের উচ্চতাই তাহাকে উচ্চ করে।

 আমি ইহা বেশ বুঝিতেছি, আমার এই প্রস্তাব যদি-বা অনেকে