পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
আত্মশক্তি।

 এই অভিষেকের পরে সমাজপতি যাহাকে তাঁহার চারিদিকে আকর্ষণ করিয়া লইবেন, কি ভাবে সমাজের কার্য্যে সমাজকে প্রবৃত্ত করিবেন, তাহা আমার বলিবার বিষদ্ধ নহে। নিঃসন্দেহ, যেরূপ ব্যবস্থা আমাদের চিরন্তন সমাজপ্রকৃতির অনুগত, তাহাই তাঁহাকে অবলম্বন করিতে হইবে-স্বদেশের পুরাতন প্রকৃতিকেই আশ্রয় করিয়া তিনি নূতনকে যথাস্থানে যথাযোগ্য আসনদান করিবেন। আমাদের দেশে তিনি লোকবিশেষ ও দলবিশেষের হাত হইতে সর্ব্বদাই বিরুদ্ধবাদ ও অপবাদ সহ্য করিবেন, ইহাতে সন্দেহমাত্র নাই। কিন্তু মহৎ পদ আরামের স্থান নহে-সমস্ত কলরবকোলাহলের মধ্যে আপনার গৌরবে তাঁহাকে দৃঢ়গম্ভীরভাবে অবিচলিত থাকিতে হইবে।

 অতএব যাঁহাকে আমরা সমাজের সর্ব্বোচ্চ সম্মানের দ্বারা বরণ করিব, তাঁহাকে একদিনের জন্যও আমরা সুখস্বচ্ছন্দতার আশা দিতে পারিব না। আমাদের যে উদ্ধত নব্যসমাজ কাহাকেও হৃদয়ের সহিত শ্রদ্ধা করিতে সম্মত না হইয়া নিজেকে প্রতিদিন অশ্রদ্ধেয় করিয়া তুলিতেছে, সেই সমাজের সূচিমুখ-কণ্টক-খচিত ঈর্ষাসন্তপ্ত আসনে যাঁহাকে আসীন হইতে হইবে, বিধাতা যেন তাঁহাকেপ্রচুর পরিমাণে বল ও সহিষ্ণুতা প্রদান করেন-তিনি যেন নিজের অন্তঃকরণের মধোই শান্তি ও কর্ম্মের মধ্যেই পুরস্কার লাভ করিতে পারেন।

 নিজের শক্তিকে আপনারা অবিশ্বাস করিবেন না, আপনারা নিশ্চর জানিবেন-সময় উপস্থিত হইয়াছে। নিশ্চয় জানিবেনভারতবর্ষের মধ্য একটি বাঁধিয়া তুলিবার ধর্ম্ম চিরদিন বিরাজ করিয়াছে। নানা প্রতিকূলব্যাপারের মধ্যে পড়িয়াও ভারতবর্ষ বরাবর একটা ব্যবস্থা করিয়া তুলিয়াছে; তাই আজও রক্ষা পাইয়াছে। এই ভারতবর্ষের উপরে আমি বিশ্বাসস্থাপন করি। এই ভারতবর্ষ এখনি এই মুহূর্ত্তেই ধীরে ধীরে নূতনকালের সহিত আপনার পুরাতনের