সহিত বাঙালীর যেন একটা প্রভেদ লক্ষিত হয়—সেই প্রভেদে বাঙালীর আন্তরিক ন্যাশনালত্বের দুর্ব্বলতাই প্রমাণ করে।
‘মহাজন’ শব্দ বাঙলায় একমাত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়, অন্য অর্থে চলিবে না। ‘সার্ব্বজনিক’ শব্দকে বিশেষ্য আকারে নেশন্ শব্দের প্রতিশব্দ করা যায় না। ‘ফরাসী সর্ব্বজন’ শব্দ ‘ফরাসী নেশন্’ শব্দের পরিবর্তে সঙ্গত শুনিতে হয় না।
‘মহাজন’ শব্দ ত্যাগ করিয়া ‘মহাজাতি’ শব্দ গ্রহণ করা যাইতে পারে। কিন্তু ‘মহৎ’শব্দ মহত্ত্বসূচক বিশেষরূপে অনেকস্থলেই নেশনশব্দের পূর্ব্বে আবশ্যক হইতে পারে। সেরূপ স্থলে ‘গ্রেট নেশন্’ বলিতে গেলে ‘মহতী মহাজাতি’ বলিতে হয় এবং তাহার বিপরীত বুঝাইবার প্রয়োজন হইলে ‘ক্ষুদ্র মহাজাতি’ বলিয়া হাস্যভাজন হইবার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু নেশন্-শব্দটা অবিকৃত আকারে গ্রহণ করিতে আমি কিছু মাত্র সঙ্কোচ বোধ করি না। ভাবটা আমরা ইংরাজের কাছ হইতে পাইয়াছি, ভাষাটাও ইংরাজি রাখিয়া ঋণ স্বীকার করিতে প্রস্তুত আছি। উপনিষদের ব্রহ্ম, শঙ্করের মায়া ও বুদ্ধের নির্ব্বাণ শব্দ ইংরাজি রচনায় প্রায় ভাষান্তরিত হয় না, এবং না হওয়াই উচিত।
রেনাঁ বলেন, প্রাচীনকালে ‘নেশন্’ ছিল না। ইজিপ্ট, চীন, প্রাচীন কাল্ডিয়া, ‘নেশন্’ জানিত না। আসিরিয়, পারসিক ও আলেক্জাণ্ডারের সাম্রাজ্যকে কোন নেশনের সাম্রাজ্য বলা যায় না।
রোমসাম্রাজ্য নেশনের কাছাকাছি গিয়াছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ নেশন্ বাঁধিতে না বাঁধিতে বর্ব্বরজাতির অভিঘাতে তাহা ভাঙিয়া টুকরা হইয়া গেল। এই সকল টুকরা বহুশতাব্দী ধরিয়া নানাপ্রকার সংঘাতে ক্রমে দানা বাঁধিয়া নেশন্ হইয়া দাঁড়াইয়াছে, এবং ফ্রান্স,, ইংলণ্ড, জর্ম্মাণি ও রাশিয়া সকল নেশনের শীর্ষস্থানে মাথা তুলিয়াছে।