পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
আত্মশক্তি।

দাররূপে সমাজের বিশেষ একটা স্থানে আশ্রয় লইত। এ কথা কেহই বলিবেন না, হিন্দুসমাজে আচারবিচারের কোন পার্থক্য নাই। পার্থক্য যথেষ্ট আছে, কিন্তু সেই পার্থক্য সামাজিক ব্যবস্থার গুণে গণ্ডীবদ্ধ হইয়া পরস্পরকে আঘাত করে না।

 আজ আর তাহা হইবার জো নাই। কোনো অংশে কোনো দল পৃথক্ হইতে গেলেই হিন্দুসমাজ হইতে তাহাকে ছিন্ন হইতে হয়। পূর্ব্বে এরূপ ছিন্ন হওয়া একটা বিভীষিকা বলিয়া গণ্য হইত। কারণ, তখন সমাজ এরূপ সবল ছিল যে, সমাজকে অগ্রাহ করিয়া টিঁকিয়া থাকা সহজ ছিল না। সুতরাং যে দল কোনো পার্থক্য অবলম্বন করিত, সে উদ্ধতভাবে বাহির হইয়া যাইত না। সমাজও নিজের শক্তিসম্বন্ধে নিঃসংশয় ছিল বলিয়াই অবশেষে ঔদার্য্য প্রকাশ করিয়া পৃথক্‌পন্থাবলম্বীকে যথাযোগ্যভাবে নিজের অঙ্গীভূত করিয়া লইত।

 এখন যে দল একটু পৃথক্ হয়, তাহাকে ত্যাগ করিতে হয়। কারণ, ইংরাজের আইন কোন্‌টা হিন্দু, কোন্‌টা অহিন্দু, তাহা স্থির করিবার ভার লইয়াছে—রফা করিবার ভার ইংরাজের হাতে নাই; সমাজের হাতেও নাই। তাহার কারণ, পৃথক্ হওয়ার দরূণ কাহারো কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নাই—ইংরাজরচিত স্বতন্ত্র আইনের আশ্রয়ে কাহারো কিছুতে বিশেষ ব্যাঘাত ঘটে না। অতএব এখন হিন্দুসমাজ কেবলমাত্র ত্যাগ করিতেই পারে। শুদ্ধমাত্র ত্যাগ করিবার শক্তি বলরক্ষা-প্রাণরক্ষার উপায় নহে।

 আক্কেল দাঁত যখন ঠেলিয়া উঠিতে থাকে, তখন বেদনায় অস্থির করে। কিন্তু যখন সে উঠিয়া পড়ে, তখন শরীর তাহাকে সুস্থভাবে রক্ষা করে। যদি দাঁত উঠিবার কষ্টের কথা স্মরণ করিয়া দাঁতগুলাকে বিসর্জন দেওয়াই শরীর সাব্যস্ত করে, তবে বুঝিব, তাহার অবস্থা ভাল নহে,—বুঝিব, তাহার শক্তিহীনতা ঘটিয়াছে।