পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
আত্মশক্তি।

বাধিয়া উঠিতেছে, এই দ্বন্দ্ব—অশান্তি, অব্যবস্থা ও দুর্ব্বলতার কারণ।

 যেখানে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব বাধিতেছে না, সেখানে ভিতরে ভিতরে অলক্ষিতভাবে সমাজ বিশ্লিষ্ট হইয়া পড়িতেছে। এই ক্ষয়রোগও সাধারণ রোগ নহে। এইরূপে সমাজ পরের সঙ্গে আপনার সীমানানির্ণয়সম্বন্ধে কোনো কর্ত্তৃত্বপ্রকাশ করিতেছে না; নিজের ক্ষয়নিবারণের প্রতিও তাহার কর্ত্তৃত্ব জাগ্রত নাই। যাহা আপনি হইতেছে, তাহাই হইতেছে; —যথন ব্যাপারটা অনেকদূর অগ্রসর হইয়া পরিস্ফুট হইতেছে, তখন মাঝে মাঝে হাল ছাড়িয়া বিলাপ করিয়া উঠিতেছে। কিন্তু আজ পর্য্যন্ত বিলাপে কেহ বন্যাকে ঠেকাইতে পারে নাই এবং রোগের চিকিৎসাও বিলাপ নহে।

 বিদেশী শিক্ষা, বিদেশী সভ্যতা আমাদের মনকে, আমাদের বুদ্ধিকে যদি অভিভূত করিয়া না ফেলিত, তবে আমাদের সামাজিক স্বাধীনতা এত সহজে লুপ্ত হইতে বসিত না।

 গুরুতর রোগে যখন রোগীর মস্তিষ্ক বিকল হয়, তখনি ডাক্তার ভয় পায়। তাহার কারণ, শরীরের মধ্যে রোগের আক্রমণ প্রতিরোধের যে ব্যবস্থা, তাহা মস্তিষ্কই করিয়া থাকেন—সে যখন অভিভূত হইয়া পড়ে, তখন বৈদ্যের ঔষধ তাহার সর্ব্বপ্রধান সহায় হইতে বঞ্চিত হয়।

 প্রবল ও বিচিত্র শক্তিশালী য়ুরোপীয় সভ্যতা অতি সহজে আমাদের মনকে অভিভূত করিয়াছে। সেই মনই সমাজের মস্তিষ্ক; বিদেশী প্রভাবের হাতে সে যদি আত্ম সমর্পণ করে, তবে সমাজ আর আপনার স্বাধীনতা রক্ষা করিবে কি করিয়া?

 এইরূপে বিদেশীশিক্ষার কাছে সমাজের শিক্ষিতলোক হৃদয়মনকে অভিভূত হইতে দিয়াছে বলিয়া কেহ বা তাহাকে গালি দেয়, কেহ বা