পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
“স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের পরিশিষ্ট।
৬১

কেন? কোনো বালক যদি নৃত্য করে, তবে তাহার মনে মনে ভূমিকম্পসৃষ্টির মৎলব আছে শঙ্কা করিয়া কেহ কি গৃহস্থদিগকে সাবধান করিয়া দিবার চেষ্টা করে?

 ব্যবস্থাবুদ্ধির দ্বারা ভারতবর্ষ বিচিত্রের মধ্যে ঐক্যস্থাপন করে, এ কথার অর্থ ইহা হইতেই পারে না, ভারতবর্ষ ষ্টীম্‌রোলার্ বুলাইয়া সমস্ত বৈচিত্র্যকে সমভূম, সমতল করিয়া দেয়। বিলাত পরকে বিনাশ করাই, পরকে দূর করাই আত্মরক্ষার উপায় বলিয়া জানে, ভারতবর্ষ পরকে আপন করাই আত্মসার্থকতা বলিয়া জানে। এই বিচিত্রকে এক করা, পরকে আপন করা যে একাকার নহে, পরন্তু পরস্পরের অধিকার সুস্পষ্টরূপে নির্দ্দিষ্ট করিয়া দেওয়া, এ কথা কি আমাদের দেশেও চীৎকার করিয়া বলিতে হইবে? আজ যদি বিচিত্রের মধ্যে ঐক্যস্থাপন করিতে, পরকে আপন করিতে না পারি—আমরাও যদি পদশব্দটি শুনিলেই, অতিথি-অভ্যাগত দেখিলেই অমনি হাঁহাঃশব্দে লাঠি হাতে করিয়া ছুটিয়া যাই, তবে বুঝিব, পাপের ফলে আমাদের সমাজের লক্ষ্মী আমাদিগকে পরিত্যাগ করিতেছেন এবং এই লক্ষ্মীছাড়া অরক্ষিত ভিটাকে আজ নিয়ত কেবল লাঠিয়ালি করিয়াই বাঁচাইতে হইবে—ইহার রক্ষাদেবতা,—যিনি সহস্যমুখে সকলকে ডাকিয়া আনিয়া সকলকে প্রসাদের ভাগ দিয়া অতি নিঃশব্দে, অতি নিরুপদ্রবে ইহাকে বাঁচাইয়া আসিয়াছেন,—তিনি কখন ফাঁকি দিয়া অদৃশ্য হইবেন, তাহারই অবসর খুঁজিতেছেন।

 গোস্বামি মহাশয় আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন— আমি যেখানে নূতন নূতন যাত্রাকথকতা প্রভৃতি রচনার প্রস্তাব করিয়াছি, সেস্থলে “নূতন” কথাটার তাৎপর্য্য কি? পুরাতনই যথেষ্ট নহে কেন?

 রামায়ণের কবি রামচন্দ্রের পিতৃভক্তি, সত্যপালন, সৌভ্রাত্র, দাম্পত্যপ্রেম, ভক্তবাৎসল্য প্রভৃতি অনেক গুণগান করিয়া যুদ্ধকাণ্ড