পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
আত্মশক্তি।

পর্য্যন্ত ছয়কাণ্ড মহাকাব্য শেষ করিলেন; কিন্তু তবু নূতন করিয়া উত্তরকাণ্ড রচনা করিতে হইল। তাঁহার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক গুণই যথেষ্ট হইল না, সর্ব্বসাধারণের প্রতি তাঁহার কর্ত্তব্যনিষ্ঠা অত্যন্ত কঠিনভাবে তাঁহার পূর্ব্ববর্ত্তী সমস্ত গুণের উপরে প্রতিষ্ঠিত হইয়া তাঁহার চরিতগানকে মুকুটিত করিয়া তুলিল।

 আমাদের যাত্রা-কথকতায় অনেক শিক্ষা আছে, সে শিক্ষা আমরা ত্যাগ করিতে চাই না, কিন্তু তাহার উপরে নূতন করিয়া আরো একটি কর্ত্তব্য শিক্ষা দিতে হইবে। দেবতা, সাধু, পিতা, গুরু, ভাই, ভৃত্যের প্রতি আমাদের কি কর্ত্তব্য, তাঁহাদের জন্য কতদূর ত্যাগ করা যায়, তাহা শিখিব; সেই সঙ্গে সাধারণের প্রতি, দেশের প্রতি আমাদের কি কর্ত্তব্য, তাহাও নূতন করিয়া আমাদিগকে গান করিতে হইবে, ইহাতে কি কোনো পক্ষের বিশেষ শঙ্কার কারণ কিছু আছে?

 একটা প্রশ্ন উঠিয়াছে, সমুদ্রযাত্রার আমি সমর্থন করি কি না; যদি করি, তবে হিন্দুধর্ম্মানুগত আচারপালনের বিধি রাখিতে হইবে কি না?

 এ সম্বন্ধে কথা এই, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া পৃথিবীর পরিচয় হইতে বিমুখ হওয়াকে আমি ধর্ম্ম বলি না। কিন্তু বর্ত্তমান প্রসঙ্গে এ সমস্ত কথাকে অত্যন্ত প্রাধান্য দেওয়া আমি অনাবশ্যক জ্ঞান করি। কারণ, আমি এ কথা বলিতেছি না যে, আমার মতেই সমাজগঠন করিতে হইবে। আমি বলিতেছি, আত্মরক্ষার জন্য সমাজকে জাগ্রত হইতে হইবে, কর্ত্তৃত্ব গ্রহণ করিতে হইবে। সমাজ যে-কোন উপায়ে সেই কর্ত্তৃত্ব লাভ করিলেই আপনার সমস্ত সমস্যার মীমাংসা আপনি করিবে। তাহার সেই স্বকৃত মীমাংসা কখন্ কিরূপ হইবে আমি তাহা গণনা করিয়া বলিতে পারি না। অতএব প্রসঙ্গক্রমে আমি দুচারিটা কথা যাহা বলিয়াছি, অতিশয় সূক্ষ্মভাবে তাহার বিচার করিতে বসা মিথ্যা। আমি যদি সুপ্ত জহরীকে ডাকিয়া বলি—“ভাই, তোমার