পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সফলতার সদুপায়।
৮৯

কর্ত্তব্যকে ফাঁকি দেওয়া। এখনি আরম্ভ করিতে হইবে। যত শীঘ্র পারি, আমরা যদি সমস্ত দেশকে কর্ম্মজালে বেষ্টিত করিয়া আয়ত্ত করিতে না পারি, তবে আমাদের চেয়ে যাহাদের উদ্যম বেশি, সামর্থ অধিক, তাহারা কোথাও আমাদের জন্য স্থান রাখিবে না। এমন কি, অবিলম্বে আমাদের শেষসম্বল কৃষিক্ষেত্রকেও অধিকার করিয়া লইবে, সেজন্য আমাদের চিন্তা করা দরকার। পৃথিবীতে কোনো জায়গা ফাঁকা পড়িয়া থাকে না; আমি যাহা ব্যবহার না করিব, অন্যে তাহা ব্যবহারে লাগাইয়া দিবে; আমি যদি নিজের প্রভু না হইতে পারি, অন্যে আমার প্রভু হইয়া বসিবে; আমি যদি শক্তি অর্জ্জন না করি অন্যে আমার প্রাপ্যগুলি অধিকার করিবে; আমি যদি পরীক্ষায় কেবলি ফাঁকি দিই; তবে সফলতা অন্যের ভাগ্যেই জুটিবে—ইহা বিশ্বের অনিবার্য্য নিয়ম।

 হে বঙ্গের নবীন যুবক, তোমার দুর্ভাগ্য এই যে, তুমি আপনার সম্মুখে কর্ম্মক্ষেত্র প্রস্তুত পাও নাই। কিন্তু যদি ইহাকে অপরাজিতচিত্তে নিজের সৌভাগ্য বলিয়া গণ্য করিতে পার, যদি বলিতে পার, নিজের ক্ষেত্র আমি নিজেই প্রস্তুত করিয়া তুলিব, তবেই তুমি ধন্য হইবে। বিচ্ছিন্নতার মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন করা, জড়ত্বের মধ্যে জীবনসঞ্চার করা, সঙ্কীর্ণতার মধ্যে উদার মনুষ্যত্বকে আহ্বান করা এই মহৎ সৃষ্টিকার্য্য তামার সম্মুখে পড়িয়া আছে—এজন্য আনন্দিত হও! নিজের শক্তির প্রতি আস্থাস্থাপন কর, নিজের দেশের প্রতি শ্রদ্ধারক্ষা কর এবং ধর্ম্মের প্রতি বিশ্বাস হারাইয়ো না। আজ আমাদের কর্ত্তৃপক্ষ বাংলাদেশের মানচিত্রের মাঝখানে একটা রেখা টানিয়া দিতে উদ্যত হইয়াছেন, কাল তাঁহারা বাংলার প্রাথমিকশিক্ষা চারখানা করিবার সঙ্কল্প করিতেছেন, নিশ্চয়ই ইহা দুঃখের বিষয়—কিন্তু শুধু কি নিরাশ্বাস দুঃখভোগেই এই দুঃখের পর্য্যবসান? ইহার পশ্চাতে কি কোনো কর্ম্ম নাই, আমাদের