পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
আত্মশক্তি।

কোনো শক্তি নাই? শুধুই অরণ্যে রোদন? ম্যাপে দাগ টানিয়া মাত্র বাংলাদেশকে দুইটুকরা করিতে গবর্মেণ্ট্ পারেন? আর, আমরা সমস্ত বাঙালি ইহাকে এক করিয়া রাখিতে পারি না? বাংলাভাষাকে গবর্মেণ্ট নিজের ইচ্ছামত চারখানা করিয়া তুলিতে পারেন? আর, আমরা সমস্ত বাঙালি তাহার ঐক্যসূত্রকে অবিচ্ছিন্ন রাখিতে পারি না? এই যে আশঙ্কা, ইহা কি নিজেদের প্রতি নিদারুণ দোষারোপ নহে? যদি কিছুর প্রতিকার করিতে হয়, তবে কি এই দোষের প্রতিকারেই আমাদের একান্ত চেষ্টাকে নিয়োগ করিতে হইবে না? সেই আমাদের সমুদয় চেষ্টার সম্মিলন ক্ষেত্রে আমাদের সমুদয় উদ্যোগের প্রেরণাস্থল, আমাদের সমুদয় পূজা-উৎসর্গের সাধারণ ভাণ্ডার যে আমাদের নিতান্তই চাই। আমাদের কয়েকজনের চেষ্টাতেই সেই বৃহৎ ঐক্যমন্দিরের ভিত্তি স্থাপিত হইতে পারে, এই বিশ্বাস মনে দৃঢ় করিতে হইবে। যাহা দুরূহ, তাহা অসাধ্য, এই বিশ্বাসে কাজ করিয়া যাওয়াই পৌরুষ। এ পর্য্যন্ত আমরা ফুটা-কলসে জল ভরাকেই কাজ করা বলিয়া জানিয়াছি, সেই জন্যই বারবার আক্ষেপ করিয়াছি,—এদেশে কাজ করিয়া সিদ্ধিলাভ হয় না। বিজ্ঞানসভায় ইংরেজিভাষায় পুরাতন বিষয়ের পুনরুক্তি করিয়াছি, অথচ আশ্চর্য্য হইয়া বলিয়াছি,— দেশের লোক আমার বিজ্ঞানসভার প্রতি এরূপ উদাসীন কেন? ইংরেজিভাষায় গুটিকয়েক শিক্ষিত লোকে মিলিয়া রেজোল্যুশন্ পাস্ করিয়াছি, অথচ দুঃখ করিয়াছি, জনসাধারণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কর্ত্তব্যবোধের উদ্রেক হইতেছে না কেন? পরের নিকট প্রার্থনা করাকেই কর্ম্ম বলিয়া গৌরব করিয়াছি, তাহার পরে পরকে নিন্দা করিয়া বলিতেছি,—এত কাজ করি, তাহার পারিশ্রমিক পাই না কেন? একবার যথার্থ কর্ম্মের সহিত যথার্থ শক্তিকে নিযুক্ত করা যাক্, যথার্থ নিষ্ঠার সহিত যথার্থ উপায়কে অবলম্বন করা যাক্, তাহার পরেও