পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সফলতার সদুপায়।
৯৫

সেইজন্যই প্রাতঃকালে পূজার পুষ্পচরনের বিধান হইয়াছে। এ কথা বলিবার সাহস ছিল না যে, রেলগাড়ি-বেলুন না থাকিলেও গৌরবের কারণ থাকিতে পারে এবং ফাঁকি দিয়া অক্সিজেন‍্বাষ্প গ্রহণ করানোর চেয়ে নির্ম্মল প্রত্যূষে সর্ব্বকর্ম্মারম্ভে সুন্দরভাবে দেবতার সেবার লোকের মনকে নিযুক্ত করিবার মাহাত্ম্য অধিক।

 এখনো এ ভাবটা আমরা যে সম্পূর্ণ ত্যাগ করিতে পারিয়াছি, তা নয়। এ কথা এখনো সম্পূর্ণ ভুলিতে পারি নাই যে, পাদ্‌রির কষ্টিপাথরে বাহা উজ্জ্বল দাগ দেয়, তাহা মূল্যবান্ হইতে পারে, কিন্তু জগতে সোনাই ত একমাত্র মুল্যবান্ পদার্থ নয়;—পাথরে কিছুমাত্র দাগ টানে না, এমন মূল্যবান্ জিনিষও জগতে আছে। যাহা হউক, বন্ধন শিথিল হইতেছে। আজ কাল অল্প অল্প করিয়া এ কথা বলিতে আমরা সাহস করিতেছি যে, পাদ্রির বিচারে যাহা নিন্দনীয়, বিলাতের বিধানে যাহা গর্হিত, আমাদের দিক্ হইতে তাহার পক্ষে বলিবার কথা অনেক আছে।

 আমরা যাহাকে পলিটিক্স্ বলি, তাহার মধ্যেও এই ভাবটা দেখিতে পাই। প্রথমে যাহা সানুনয় প্রসাদভিক্ষা ছিল, দ্বিতীয় অবস্থাতে তাহার ঝুলি খসে নাই, কিন্তু তাহার বুলি অ্ন্যরকম হইয়া গেছে— ভিক্ষুকতা যতদূর পর্য্যন্ত, উদ্ধত স্পর্দ্ধার আকার ধারণ করিতে পারে, তাহা করিয়াছে। আমাদের আধুনিক আন্দোলনগুলিকে আমরা বিলাতী রাষ্ট্রনৈতিক ক্রিয়াকলাপের অনুরূপ মনে করিয়া উৎসাহবোধ করিতেছি।

 তৃতীয় অবস্থায় আমরা ইহার উপরের ধাপে উঠিবার চেষ্টা করিতেছি। এ-কথা বলিতে শুরু করিয়াছি যে, হাতজোড় করিয়াই ভিক্ষা করি, আর চোখ রাঙাইয়াই ভিক্ষা করি, এত সহজ উপায়ে গৌরভলাভ করা যায় না—দেশের জন্য স্বাধীনশক্তিতে যতটুকু কাজ নিজে