পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

সত্য সহাস্যে কহিল, থাকতে কি করে? প্রমদা বলে সত্যই ত কেউ ছিল না,-কবির কল্পনা রমণী বাধা দিয়া কহিল, তবে অমন কল্পনা করা কেন ? আচ্ছা, সবাই বলে, সমস্ত মানুষের ভেতরেই ভগবান আছেন, আত্মা আছেন, কিন্তু প্রমদার চরিত্র দেখলে মনে হয় না যে, তার ভেতরেও ভগবান ছিলেন। সত্যি বলচি তােমাকে, কোথায় বড় বড় লােকের বই পড়ে মানুষ ভাল হবে, মানুষকে মানুষ ভালবাসবে, তা না, এমন বই লিখে দিলেন যে, পড়লে মানুষের ওপর মানুষের ঘৃণা জন্মে যায় বিশ্বাস হয় যে সত্যিই সব মানুষের অন্তরেই ভগবানের মন্দির আছে। সত্য বিস্মিত হইয়া তাহাও মুখপানে চাহিয়া কহিল, তুমি বুঝি খুব বই পড় । | রমণী কহিল, ইংরেজী জানিনে ত, বাংলা বই যা বেরোয়, সব পড়ি। এক-একদিন সারারাত্রি পড়ি -- এই যে বড় রাস্তা-চল না আমাদের বাড়ি, যত বই আছে সব দেখাব। সত্য চমকিয়া উঠিল--তােমাদের বাড়ি? হাঁ, আমাদের বাড়ি - চল, যেতে হবে তােমাকে। হঠাৎ সত্যৰ মূখ পাণ্ডুর হইয়া গেল, সে সভয়ে বলিয়া উঠিল, না ছি ছি,-- ছি ছি কিছু নেই – চল।। না না, আজ না –আজ থাক, বলিয়া সত্য কম্পিত দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। আজ তাহার এই অপরিচিত প্রেমাস্পদার উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধার ভারে তাহার হৃদয় অবনত হইয়া রহিল।