পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

সেই অনিন্দ্যসুন্দর মাতৃমুখ হইতে সদ্যবিকশিত গােলাপ-সদৃশ শিশুব মুখের প্রতি তাহার দৃষ্টি নিবদ্ধ হইয়া বহিল। রাধারানী নিস্তব্ধ। বিজলী নির্নিমেষ চক্ষে চাহিয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দাড়াইয়া দুই হাত প্রসারিত করিয়া শিশুকে কোলে টানিয়া লইযা সজোরে বুকে চাপিয়া ধরিয়া ঝরঝর করিয়া কাঁদিয়া ফেলিল। রাধারানী কহিল, চিনেচ দিদি ? | চিনেচি বােন। 'রাধারানী কহিল, দিদি, সমুদ্রমন্থন করে বিষটুকু তার নিজে খেয়ে সমস্ত অমৃতটুকু এই ছােটবােনটিকে দিয়ে। তােমাকে ভালবেসেছিলেন বলেই আমি তাকে পেয়েছি। সত্যেরে একখানি ক্ষুদ্র ফটোগ্রাফ হাতে তুলিয়া বিজলী একদৃষ্টে দেখিতেছিল ; মুখ তুলিয়া মৃদু হাসিয়া কহিল, বিষের বিষই যে অমৃত বােন। আমি বঞ্চিত হইনি ভাই। সেই বিষই এই ঘােব পাপিষ্ঠাকে অমর করেছে। রাধাবানী সে কথার উত্তব না দিয়া কহিল, দেখা করবে দিদি? বিজলী একমুহূর্ত চোখ বুজিয়া স্থির থাকিয়া বলিল, না দিদি। চার বছর আগে যেদিন তিনি এই অস্পৃশ্যটাকে চিনতে পেরে, বিষম ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন, সেদিন দর্প করে বলেছিলুম, আবার দেখা হবে, আবার তুমি আসবে। কিন্তু, সেই দর্প আমার রইল না, আর তিনি এলেন না। কিন্তু, আজ দেখতে পাচ্ছি, কেন দর্পহারী আমার সে দর্প ভেঙ্গে দিলেন। তিনি ভেঙ্গে দিয়ে যে কি করে গড়ে দেন, কেড়ে নিয়ে যে কি করে ফিরিয়ে দেন, সে কথা আমার চেয়ে আজ কেউ জানে না বােন! বলিয়া সে আর একবার ভাল করিয়া আঁচলে চোখ মুছিয়া কহিল, প্রাণের জ্বালায় ভগবানকে নির্দয় নিষ্ঠুর বলে অনেক দোষ দিয়েছি, কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, এই পাপিষ্ঠাকে তিনি কি দয়া করেছেন। তাকে ফিরিয়ে এনে দিলে, আমি যে সব