পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

হরিচরণ বুঝিল, জ্বর আসিতে আর অধিক বিলম্ব নাই! মধ্যে মধ্যে তাহার প্রায়ই জ্বর হইত; সুতরাং এসব লক্ষণ তাহার বিশেষ জানা ছিল। হরিচরণ আর বসিতে পাবিল না, ঘরে যাইয়া শুইয়া পড়িল। ছােটবাবুর যে বিছানা প্রস্তুত হইল না, এ কথা আর মনে রহিল না। বাত্রে সকলেই আহারাদি করিল, কিন্তু হরিচরণ আসিল না! গৃহিণী দেখিতে আসিলেন। হরিচরণ ঘুমাইয়া আছে, গায়ে হাত দিয়া দেখিলেন গা বড় গরম। বুঝিলেন, জ্বর হইয়াছে, সুতরাং আর বিরক্ত করিয়া চলিয়া গেলেন। রাত্রি প্রায় দ্বিপ্রহর হইয়াছে। ভােজ শেষ করিয়া দুর্গাদাসবাবু বাড়ি আসিয়া দেখিলেন, শয্যা প্রস্তুত হয় নাই। একে ঘুমের ঘাের, তাহাতে আবার সমস্ত পথ কি করিয়া বাড়ি যাইয়া চিৎ হইয়া শুইয়া পড়িবেন, আর হরিচবণ শ্রান্ত পদযুগলকে বিনামা হইতে বিমুক্ত করিয়া অল্প অল্প টিপিয়া দিতে থাকিবে এবং সেই সুখে অল্প তন্দ্রার ঝোঁকে গুড়গুড়ির নল মুখে লইয়া একেবারে প্রভাত হইয়াছে দেখিতে পাইবেন, ইত্যাদি ভাবিতে ভাবিতে আসিতেছিলেন। একেবাবে হতাশ হইয়া বিষম জ্বলিয়া উঠিলেন, মহা ক্রুদ্ধ হইয়া দুই-চারবার হবিচবণ, হরি, হবে ইত্যাদি রবে চীৎকার করিলেন। কিন্তু কোথায় হরি? সে জ্বরের প্রকোপে সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িয়া আছে। তখন দুর্গাদাসবাবু ভাবিলেন, বেটা ঘুমাইয়াছে ; ঘরে গিয়া দেখিলেন, বেশ মুড়ি দিয়া শুইয়া আছে। আর সহ্য হইল না। ভয়ানক জোরে হরির চুল ধরিয়া টানিয়া তাহাকে বসাইবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু হরি ঢলিয়া বিছানার উপর পুনর্বার শুইয়া পড়িল। তখন বিষম ক্রুদ্ধ হইয়া দুর্গাদাসবাবু হিতাহিত বিস্মৃত হইলেন। হরির পিঠে সবুট পদাঘাত করিলেন। সে ভীম প্রহারে চৈতন্যলাভ করিয়া উঠিয়া বসিল। দুর্গাদাসবাবু বলিলেন, কচি খােকা ঘুমিয়ে পড়েছে, বিছানাটা কি আমি করব? কথায় কথায় ৩.