পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

এবারেও আমাকে ডিঙিয়ে মাস-ছয়েকের জন্যে সব-জজ হয়ে গেলেন। হগসাহেব হাইকোটে আসা পর্যন্ত বছর-তিনেক ধরে এই ব্যাপারই চলচে-একটা কথাও বলিনি। ভেবেছিলাম ওদের অন্যায়টা একদিন ওরা নিজেরাই বুঝবে, কিন্তু দেখলাম সে হবার নয়। অন্ততঃ ও লােকটি থাকতে নয়। অবিচার এতদিন সয়েছিলাম, কিন্তু আর সইলে মনুষ্যত্ব যাবে। কাল বিকেলেই সদরআলার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এমনি ধরনের একটা কথা আলােকলতা আভাসে-ইঙ্গিতে শুনে এসেছিলেন কিন্তু অর্থ তার বুঝতে পারেন নি। এখনাে পারলেন না, শুধু বললেন, তদবির-তাগাদা না করলে আজকালকার দিনে কোন্ কাজটা হয় ? মানুষ্যত্ব যাতে না যায় তার কি করেছ শুনি? অবিনাশ বললেন, তদবির-তাগাদা পারিনে, কিন্তু যেটা পারি সেটা করেছি বৈ কি।। আলােকলতা স্বামীর মুখের পানে চেয়ে এখনও তাৎপর্য ধরতে পারলেন না, কিন্তু ভয় পেলেন। বললেন, সেটা কি শুনি না? কি করেছ বলে না? অবিনাশ বললেন, সেটা হচ্ছে কাজে ইস্তফা দেওয়া – দিয়েছি। আলােকের হাত থেকে সেলাইটা মাটিতে পড়ে গেল। বজ্রাহতের মতাে কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে থেকে বললেন, বলে কি গাে? এতগুলাে লােককে না খেতে দিয়ে উপােস করিয়ে মারবার সঙ্কল্প করেছ? কাজ ছাড়াে দিকি—আমি তােমার দিব্যি করে বলচি সেই দিনই গলায় দড়ি দিয়ে মরবাে।। অবিনাশ স্থির হয়ে রইলেন, জবাব দিলেন না। দরখাস্ত যদি দিয়ে থাকো, কালই উইথড্র করবে বলো? না।