পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

দেব—এখন থাক গে খাওয়া। ওঠো বাবা, চলাে। এই বলে সে তার হাত ধরে একেবারে দাড় করিয়ে দিলে। ওরা সত্যি চলে যায় দেখে আলােক নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললেন, একটু দাড়াও। সত্যিই কি একবারও ভাবােনি, চাকরি ছেড়ে দিলে তােমার বাড়ির এতগুলি প্রাণী খাবে কি! | অবিনাশ উত্তর দিতে গেলেন, কিন্তু এবারেও বাধা এলাে মেয়ের দিক থেকে। সে বললে, খাবার জন্যে কি সত্যিই তােমার ভয় হয়েছে মা? কিন্তু হবার ত কথা নয়। চাকরি ছাড়লেও বাবা পেনশন পাবেন—সে তিন শ’ টাকার কম হবে না। পাশের বাড়ির সঞ্জীববাবু ষাট টাকা মাইনে পান, খেতে তার ন-দশ জন । কতদিন দেখে এসেছি, খাওয়া তাদের আমাদের চেয়ে মন্দ নয়। তাদের চলে যাচ্ছে, আর আমাদের তিন-চারজনের খাওয়া-পরা চলবে না ! মায়ের আর ধৈর্য রইলাে না, একটা বিশ্রী কটুক্তি করে চেঁচিয়ে উঠলেন --যা দূর হ আমার সুমুখ থেকে। তাের নিজের সংসার , হলে গিন্নীপনা করিস, কিন্তু আমার সংসারে কথা কইলে বাড়ি থেকে বার করে দেবে। | মেয়ে একটু হেসে বললে, বেশ ত মা, তাই দাও। বাবার হাত ধরে আমি চলে যাই, তুমি আর দাদা বাবার সমস্ত পেনশন নিয়ে যা ইচ্ছে করে, আমরা কেউ কথা কব না। আমি যেকোন মেয়ে ইস্কুলে চাকরি করে আমার বুড়াে বাপকে খাওয়াতে পারবাে। মা আর কথা কইলেন না, দেখতে দেখতে তঁার দু চোখ উপচে অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়লাে। মেয়ে বাপের হাতে একটু চাপ দিয়ে বললে, বাবা, চলে না যাই। সন্ধ্যে হয়ে যাবে । অবিনাশ পা বাড়াতেই আলোকলতা আঁচলে ৩৭