পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

আপনার কবিতাটি চমৎকার হয়েছে। আগামীবারে আর একটা পাঠাবেন—একটু ছােট করে। এবং ঐ সঙ্গে শাশ্বতী দেবীর একটি রচনা অতি অবশ্য পাঠাবেন।” জানিনে, বাতায়ন’-সম্পাদক সত্যি বলেন, না ঠাট্টা করেন। কিংবা তার আর কোন উদ্দেশ্য আছে। শাশ্বতী দেখে হাসে—বলে, দাদা, এ চিঠি বন্ধুমহলে আর দেখিয়ে বেড়িও না। কেন বলতাে? , এমনি বলচি। নিজের প্রশংসা নিজের হাতে প্রচার করে বেড়ানাে কি ভালাে? কবিতা পাঠানাের আগে সে বােনকে পড়ানাের ছলে ভুলচুকগুলাে সব শুধরে নেয়। সংশোধনের মাত্রা কিছু বেশি হয়ে পড়লে লজ্জিত হয়ে বলে, তাের মত আমি ত আর বাবার কাছে সংস্কৃত ব্যাকরণ, কাব্য, সাহিত্য পড়িনি, আমার দোষ কি? কিন্তু জানিস শাশ্বতী, আসলে এ কিছুই নয়। দশ টাকা মাইনে দিয়ে একটা পণ্ডিত রাখলেই কাজ চলে যায়। কিন্তু কবিতার সত্যিকার প্রাণ হলো কল্পনায়, আইডিয়ায়, তার প্রকাশ-ভঙ্গিতে। সেখানে তাের কপাল মুগ্ধবােধের বাপের সাধ্যি নেই যে দাত ফোটায়। সে সত্যি দাদা। হিমাংশুর কলমের ডগায় একটি চমৎকার মিল এসে পড়েছিল, কিন্তু মায়ের তীব্রকণ্ঠ হঠাৎ সমস্ত ছত্রভঙ্গ করে দিল। কমল রেখে পাশের দোর ঠেলে সে এ ঘরে ঢুকতেই মা চেঁচিয়ে উঠলেন, জানিস হিমাংশু, আমাদের কি সর্বনাশ হলাে? উনি চাকরি ছেড়ে দিলেন, নইলে মনুষ্যত্ব চলে যাচ্ছিল। কেন? কেননা কোথাকার কে একজন ওঁর বদলে সব-জজ হয়েছে, উনি নিজে হতে পারেন নি। আমি স্পষ্ট বলছি, এ হিংসে ছাড়া আর কিছু নয়। নিছক হিংসে।