পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

মােজা পায়ে দিয়া ভিড় করিয়া উপাসনা করিতে লাগিলেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে তাহারা এত বেশী সংস্কার করিয়া ফেলিলেন যে, তাহাদের সমস্ত কার্যকলাপই তৎকাল-প্রতিষ্ঠিত আচার-বিচাবের সহিত একেবারে উলটা বলিয়া লােকের চক্ষে পড়িতে লাগিল। ইহা যে হিন্দুর পরম সম্পদ বেদমূলক ধর্ম, সে কথা কেহই বুঝিতে চাহিল না। আজও পাড়াগায়ে লােক ব্রাহ্মদের খ্রীষ্টান বলিয়াই মনে করে। কিন্তু যে-সকল সংস্কার তাহার প্রতিত করিয়া গিয়াছিলেন, দেশের লোক যদি তাহা নিজেদেরই দেশের জিনিস বলিয়া বুঝিতে পারি এবং গ্রহণ করিত, তাহা হইলে আজ বাঙালী সমাজের এ দুর্দশা বােধ করি থাকিত না। অসীম দুঃখময় এই বিবাহ-সমস্যা, বিধবার সমস্যা, উন্নতিমূলক বিলাত-যাওয়া সমস্যা, সমস্তই একসঙ্গে একটা নিদিষ্ট কুলে আসিয়া পৌছিতে পারিত। অন্যপক্ষে গতি এবং বৃদ্ধিই যদি সজীবতার লক্ষ্মণ হয়, তাহা হইলে বলিতে হইবে, এই ব্রাহ্মসমাজও আজ মৃত্যুমুখে পতিত না হইলেও অকাল-বার্ধক্যে উপনীত হইয়াছে। সংস্কার মানেই প্রতিষ্ঠিতের সহিত বিরােধ ; এবং অত্যন্ত সংস্কারের চেষ্টাই চরম বিরােধ বা বিদ্রোহ। ব্রাহ্মসমাজ এ কথা বিস্মৃত হইয়া অত্যল্পকালের মধ্যেই সংস্কার, রীতি-নীতি, আচার-বিচার সম্বন্ধে নিজেদের এতটাই স্বতন্ত্র এবং উন্নত করিয়া ফেলিলেন যে, হিন্দু-সমাজ হঠাৎ তীব্র ক্রোধ ভুলিয়া হাসিয়া ফেলিল এবং নিজেদের অবসরকালে ইহাদিগকে লইয়া এখানে ওখানে বেশ একটু আমােদ করিতেও লাগিল। হায় রে । এমন ধর্ম, এমন সমাজ, পরিশেষে কিনা পরিহাসের বস্তু হইয়া উঠিল। জানি না, এই পরিহাসের জরিমানা কোনদিন হিন্দুকে সুদ-সুদ্ধ উসুল দিতে হইবে কি না। কিন্তু ব্রাহ্মই বল, আর হিন্দই বল, বাংলার বাঙালী-সমাজে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইল দুই দিক দিয়াই।। ৪৭।