পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

যাচ্ছিস নে—ঐ একফেঁটা মেয়ের সামনে তাের আর লজ্জা কি! | আমি কারুকে লজ্জা করিনে, বলিয়া সত্য পাচার মত মুখ করিয়া সুমুখের আসনে বসিয়া পড়িল। মা চলিয়া গেলেন। মিনিট-দুয়ের মধ্যে সে খাবারগুলো কোনমতে নাকেমুখে গুজিয়া উঠিয়া গেল । বাহিকের ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, ইতিমধ্যে বন্ধুরা জুটিয়াছে এবং পাশার চক পাতা হইয়াছে। সে প্রথমেই দৃঢ় আপত্তি প্রকাশ কবিয়া কহিল, আমি কিছুতেই বসতে পারব না—আমার ভারী মাথা ধবেচে। বলিয়া ঘরের এক কোণে সরিয়া গিয়া তাকিয়া মাথায় দিয়া চোখ বুজিয়া শুইয়া পড়িল। বন্ধুরা মনে মনে কিছু আশ্চর্য হইল এবং লােকাভাবে পাশা তুলিয়া দাবা পাতিয়া বসিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক চেঁচামেচি ঘটিল, কিন্তু সত্য একবার উঠিল না, একবার জিজ্ঞাসা করিল না—কে হারিল, কে জিতিল। আজ এ-সব তাহার ভালই লাগিল না। বন্ধুরা চলিয়া গেলে সে বাড়ির ভিতরে ঢুকিয়া সােজা নিজের ঘরে যাইতেছিল, ভাড়ারের বারান্দা হইতে মা জিজ্ঞাসা করিলেন, এর মধ্যে শুতে যাচ্ছিস যে রে ? শুতে নয়, পড়তে যাচ্ছি। এম. এ.’র পড়া সােজা নয় ত! সময় নষ্ট করলে চলবে কেন ? বলিয়া সে গূঢ় ইঙ্গিত করিয়া দুমদুম শব্দ করিয়া উপরে উঠিয়া গেল। | আধঘণ্টা কাটিয়াছে, সে একটি ছত্রও পড়ে নাই। টেবিলের উপর বই খােল, চেয়ারে হেলান দিয়া, উপরের দিকে মুখ করিয়া কড়িকাঠ ধ্যান করিতেছিল, হঠাৎ ধ্যান ভাঙ্গিয়া গেল। সে কান খাড়া করিয়া শুনিল—বুম। আর একমুহূর্ত—ঝুমঝুম। সত্য সােজা উঠিয়া বসিয়া দেখিল, সেই আপাদমস্তক গহনা-পরা লক্ষ্মীঠাকরুনটির মত