পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

শাস্ত্রীয় বিধি-নিষেধ আমাদেরই ভগবান ও পরমপূজ্য মুনিঋষির তৈরী। এই তপােবনেই তারা মৃতসঞ্জীবনী লতাটি পুতিয়া গিয়াছিলেন। সুতরাং, যদিচ প্রক্ষিপ্ত শ্লোক ও নিরর্থক ব্যাখ্যারূপ গুল্ম ও কণ্টকতৃণে এই তপােৰনের মাঠটি সম্প্রতি সমাচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সেই পরম শেয়ঃ ইহারই মধ্যে কোথাও প্রচ্ছন্ন হইয়া আছেই। অতএব আইস, হে সনাতন হিন্দুর দল, আমরা এই হােমধূপ-পূত মাঠের সমস্ত ঘাস ও তৃণ চক্ষু মুদিয়া নির্বিকারে চর্বণ করিতে থাকি। আমরা অমৃতের পুত্র-সুতরাং সেই অমৃত-লতাটি একদিন যে আমাদের দীর্ঘ জিহ্বায় আটক খাইবেই, তাহাতে কিছুমাত্র সংশয় নাই। ইহাতে সংশয় না থাকিতে পারে। কিন্তু অমৃতের সকল সন্তানই কঁচা ঘাস হজম করিতে পারিবে কি না, তাহাতেও কি সংশয় নাই ! কিন্তু আমি বলি, এই উদর এবং জিহ্বার উপর নির্ভর না করিয়া বুদ্ধি এবং দৃষ্টিশক্তির সাহায্য লইয়া কাঁটাগাছগুলা বাছিয়া ফেলিয়া, সেই অমৃত-লতাটির সন্ধান করিলে কি কাজটা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং মানুষের মত দেখিতে হয় না? | ভগবান মানুষকে বুদ্ধি দিয়াছেন কিজন্য ? সে কি শুধু আর একজনের লেখা শাস্ত্রীয় শ্লোক মুখস্থ করিবার জন্য ? এবং একজন তাহার কি টীকা করিয়াছেন, এবং আর একজন সে টীকার কি অর্থ করিয়াছেন—তাহাই বুঝিবার জন্য ? বুদ্ধির আর কি কোন স্বাধীন কাজ নাই? কিন্তু বুদ্ধির কথা তুলিলেই পণ্ডিতেরা লাফাইয়া উঠেন ; ক্রুদ্ধ হইয়া বারংবার চীৎকার করিতে থাকেন। শাস্ত্রের মধ্যে বুদ্ধি খাটাইবে কোন্‌খানে? এ যে শাস্ত্র। তাদের বিশ্বাস, শাস্ত্রীয় বিচার শুধু শাস্ত্রকথার লড়াই। তাহার হেতু, কারণ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, সত্য মিথ্যা, এ-সকল নিরূপণ করা নয়। শাস্ত্রব্যবসায়ীরা কতকাল হইতে যে এরূপ অবনত হীন হইয়া পড়িয়াছেন, ৫৪