পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
আধুনিক সাহিত্য

ঘোষের সহিত কেবল চকিতের মতো আমাদের পরিচয় করাইয়া তাহাকে অপসৃত করিয়া দিয়াছেন— কিন্তু সেই স্বল্প কালের পরিচয়েই আমাদের মনে একটা আক্ষেপ রাখিয়া দিয়াছেন। আমাদের বিশ্বাস, লেখক মনোযোগ করিলে এই শ্রীধর ঘোষটিকে একটি গ্রন্থের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করিয়া আর-একটি উপন্যাসকে প্রাণদান করিতে পারিতেন। আমরা শ্রীধরের সংক্ষেপ পরিচয়টি এ স্থলে উধৃত করি।—

 ‘এই ঘোষ-পরিবার বৈষ্ণব পরিবার, গোঁসায়ের শিষ্য। শ্রীধর ঘোষ মহাশয় অতি সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোক ছিলেন। উদরাম্নের জন্য স্নেচ্ছের অধীনে কাজ করিতেন বটে, কিন্তু নিষ্ঠার কিছুমাত্র ব্যাঘাত হইত না। আপিসে যখন কর্ম করিতেন তখন তাহার নাসাতে তিলক ও সর্বাঙ্গে হরিনামের ছাপ দৃষ্ট হইত।... মানুষটি শ্যামবর্ণ সুস্থ ও সবলদেহ ছিলেন, মুখটি সদ্ভাবে ও ভক্তিতে যেন গদ‍্গদ, সে মুখ দেখিলেই কেমন হৃদয় স্বভাবত তাঁহার দিকে আকৃষ্ট হইত। ঘোষজা মহাশয় আপিসের প্রবেশের দ্বারের পার্শ্বের ঘরেই বসিতেন, এবং যত গাড়ি মাল আমদানি ও রপ্তানি হইত তাহার হিসাব রাখিতেন। সুতরাং তাঁহাকে প্রতিদিন প্রাতঃকালে আপিসে প্রবেশের সময়ে অনেকবার এই প্রশ্ন শুনিতে হইত, কী ঘোষজামশাই, খবর কী? সব কুশল তো? অমনি ঘোষজার উত্তর, আজ্ঞে, গোবিন্দের প্রসাদে সবই কুশল। ঘোষজা দোলের সময় কিছু ব্যয় করিতেন, লোকজনকে শ্রদ্ধাসহকারে আহ্বান করিয়া উত্তমরূপে খাওয়াইতেন। এইজন্য আপিসের লোক মাঘ মাস পড়িলেই জিজ্ঞাসা করিত, “কী ঘোষজামশাই, এবার দোল করবেন তো?” অমনি উত্তর, “আজ্ঞে, কী জানি, যা গোবিন্দের ইচ্ছা।” গোবিন্দের প্রতিনির্ভরের ভাব তাঁহার এমন স্বাভাবিক ছিল যে, আট বৎসর বয়সে ওলাউঠা যোগে তাঁহার দ্বিতীয় পুত্রটির কাল হইলে, তাহারই তিন-চারি দিন পরে আপিসের একজন লোক জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী ঘোমশাই, ছেলে দুটো মানুষ হচ্ছে তো?” ঘোষজা উত্তর