পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৩১

শুভবিবাহ

রাস্কিন এক জায়গায় বলিয়াছেন, ‘মহং আর্ট্‌, মাত্রই স্তব। সেই সঙ্গেই তাহাকে বলিতে হইয়াছে, কোনাে বড়াে জিনিসকে সংজ্ঞার দ্বারা বাধা সহজ নহে। অতএব, আর্ট্‌ ব্যাপারটা যে স্তব, সেটা খােলসা করিয়া বােঝানাে আবশ্যক।

 মানুষ বিশ্বসংসারে যাহা ভালােবাসে আর্টের দ্বারা তাহার স্তব করে। সুন্দর গড়ন দিয়া মানুষ যখন একটা সামান্য ঘট প্রস্তুত করে তখন সে কী করে? না, রেখার যে মনােহর রহস্য আমরা ফুলের পাপড়ির মধ্যে, ফলের পূর্ণতার মধ্যে, পাতার ভঙ্গিমায়, জীবশরীরের লাবণ্যে দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছি, মানুষ ঘটের গঠনে বিশ্বের সেই রেখাবিন্যাস-চাতুরীর প্রশংসা করে। বলে যে ‘জগতে চোখ মেলিয়া এই সকল বিচিত্র সুষমা আমার ভালাে লাগিয়াছে।’

 এইখানে একটা কথা ভাবিবার আছে। বিশ্বপ্রকৃতি বা মানবপ্রকৃতির মধ্যে যাহা-কিছু মহৎ বা সুন্দর, তাহাই আমাদের স্তবের যােগ্য, সুতরাং তাহাই আর্টের বিষয়, এ কথা বলিলে সমস্ত কথা বলা হয় না।

 প্রাণের প্রতি প্রাণের, মনের প্রতি মনের, হৃদয়ের প্রতি হৃদয়ের একটা স্বাভাবিক টান আছে। ইহাকে বিশেষভাবে সৌন্দর্য বা ঔদার্যের আকর্ষণ বলিতে পারি না। ইহাকে ঐক্যের আকর্ষণ বলা যাইতে পারে। আমি মানুষ, কেবল এইজন্যই মানুষের সকল বিষয়েই আমার মনের একটা ঔৎসুক্য আছে। আমি বাঙালি, এইজন্য বাঙালির তুচ্ছ বিষয়টিতেও আমার মনের মধ্যে একটা সাড়া পাওয়া যায়। গ্রামের দিঘির ভাঙা ঘাটটি আমার ভালাে লাগে সুন্দর বলিয়া নয়, গ্রামকে ভালােবাসি বলিয়া। গ্রামকে কেন ভালােবাসি? না, গ্রামের লােজনদের প্রতি আমার মনের একটা টান আছে। কিন্তু গ্রামের