পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শুভবিবা
১৩৩

উত্তরে বলিব, এমন করিয়া হিসাব খইয়া দেখা চলে না। আপিস হইতে ফিরিয়া আসিলে ঘরের লোক জিজ্ঞাসা করিতে পারে, আজ তুমি কী রোজগার করিয়া আনিলে? লাভের পরিমাণ তখনই তাহাকে গুনিয়া দেখানো যাইতে পারে। কিন্তু বন্ধুবান্ধবের বাড়ি ঘুরিয়া আসিলে যদি প্রশ্ন ওঠে ‘আজ তুমি কী লাভ করিলে’ তবে থলি ঝাড়িয়া তাহা হাতে হাতে দেখানো সম্ভবপর হইতে পারে না।

 সাহিত্যেও কোনো কোনো বিশেষ গ্রন্থে কী পাওয়া গেল তাহা বেশ স্পষ্ট করিয়া দেখানো যাইতে পারে। কিন্তু এমন গ্রন্থও আছে যাহার লাভ এমন করিয়া হিসাবের মধ্যে আনা যায় না যাহা নূতন শিক্ষা নহে, যাহা মহান্ উপদেশ নহে, যাহা অপরূপ সৃষ্টি নহে যাহা কেবল পরিচিতের সঙ্গে পরিচয়, আলাপীর সঙ্গে আলাপ, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব মাত্র।

 কিন্তু জীবনের আনন্দের অধিকাংশই এইরূপ অত্যন্ত সহজ এবং সামান্য জিনিস লইয়াই তৈরি। আকস্মিক, অদ্ভুত, অপূর্ব আমাদের জীবনের পথে দৈবাৎ আসিয়া জোটে, তাহার জন্য যে বসিয়া থাকে বা খুঁজিয়া বেড়ায় তাহাকে প্রায়ই বঞ্চিত হইতে হয়।

 ‘শুভবিবাহ’ একটি গল্পের বই; স্ত্রীলোকের লেখা। ইহার গল্পের ক্ষেত্রটি কলিকাতা-কায়স্থসমাজের অন্তঃপুর। এটুকু বলিতে পারি, মেয়ের কথা মেয়েতে যেমন করিয়া লিখিয়াছে এমন কোন পুরুষ গ্রন্থকার লিখিতে পারিত না।

 পরিচয় থাকিলেই তাহার বিষয়ে যে সহজে লেখা যায় এ কথা ঠিক নহে। নিত্যপরিচয়ে আমাদের দৃষ্টিশক্তির জড়তা আনে; মনকে যাহা নূতন করিয়া, বিশেষ করিয়া আঘাত না করে, মন তাহাকে জানিয়াও জানে না। যাহা সুপরিচিত তাহার প্রতিও মনের নবীন ঔৎসুক্য থাকা একটি দুর্লভ ক্ষমতা।