পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাকার ও নিরাকার
১৪৩

 নানক যে জগতের ভক্তশ্রেষ্ঠদের মধ্যে একজন নহেন তাহা কেহ সাহস করিয়া বলিবেন না; তিনি যে সোহহংব্রহ্মবাদী ছিলেন না, ইহাও নিঃসন্দেহ। তিনি যে প্রচলিত মূর্তি-উপাসনা বিশেষরূপে পরিত্যাগ করিয়া অমূর্ত-উপাসনা প্রচার করিয়াছেন, ইহার একটি বৈ কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। নিশ্চয় তিনি নিরাকার উপাসনায় চরিতার্থতা লাভ করিতেন এবং মূর্তি উপাসনায় তাহার ব্যাঘাত করিয়াছিল।

 ব্রাহ্মদের মধ্যেও নিঃসন্দেহে কেহ-না-কেহ আছেন যিনি প্রবলভক্তির আবেগ-বশতই মূর্তিপূজা পরিহার-পূর্বক সমস্ত জীবন নিরাকার-উপাসনায় যাপন করিয়াছেন। গ্রন্থকারের মতে তিনি ভ্রান্ত হইতে পারেন, কিন্তু তিনি যে ভক্ত তাহা কেবল তর্কে নহে, আচরণে এবং বহুপীড়ন ও ত্যাগ স্বীকারে প্রমাণ করিয়াছেন।

 এককালে ভারতবর্ষে মূর্তিপূজা ছিল না। কিন্তু সেই দূর কাল সম্বন্ধে ঐতিহাসিক প্রমাণ উত্থাপন করা নিস্ফল। আধুনিক কালের যে-কয়টি উদাহরণ দেওয়া গেল তাহা হইতে অন্তত এইটুকু প্রমাণ হয় যে, কোনো কোনো ভক্ত মূর্তিপূজায় বিরক্ত হইয়া তাহা ত্যাগ করিয়াছেন এবং অনেক ভক্ত পৃথিবীর অনেক দেশে অমূর্ত-উপাসনায় ভক্তিবৃত্তির পরিতৃপ্তি লাভ করিয়াছেন। গ্রন্থকার বলেন, ‘মানিলাম তাহারা মূর্তিপূজা করেন না, কিন্তু তাহারা নিরাকার-উপাসনা করেন ইহা হইতেই পারে না।’ কারণ, ‘জাতিবাচক ও গুণবাচক পদার্থের জ্ঞান সাকার।’ এবং ‘জাতিবাচক ও গুণবাচক পদার্থ অবলম্বনে ঈশ্বরের জ্ঞান সাকার।’

 এ কেমন তর্ক? যেমন—যদি আমি বলি ‘ক বাঁকা পথে চলে এবং খ সোজা পথে চলে’ তুমি বলিতে পারো, ‘খও সোজা পথে চলে, কারণ সরল রেখা কাল্পনিক, পৃথিবীতে কোথাও সরল রেখা নাই।’