পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাকার ও নিরাকার
১৪৯

আকাশের দিকে উড়িতে হইবে সে পথ কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়ের পথ, ধূলির পথ, পৃথিবীর পথ নহে; তাহা পদচিহ্নহীন বায়ুর পথ, আলোকের পথ, আকাশের পথ। আমাদের পক্ষে সেই এক পথ।

 যাঁহারা মুক্তক্ষেত্রে বাস করেন তাহারা মাটিতে বসিয়াও আকাশের আলো পান, কিন্তু যাহারা জটিল প্রবৃত্তিজালে পরিবৃত হইয়া আছে তাহাদিগকে একেবারে পৃথিবীর দিক হইতে উড়িয়া বাহির হইয়া যাইতে হয়।

 তাহা না করিয়া আমরা যদি আমাদেরই প্রবৃত্তি আমাদেরই আকৃতি দিয়া দেবতা গড়ি তবে তাহার মধ্যে মুক্তি কোন্‌খানে। যদি তাহাকে স্নান করাই, খাওয়াই, মশারিতে শোওয়াই, এমন-কি, তাহার জন্য নটী নিযুক্ত করিয়া রাখি, তবে তাহার ফল কী হয়? তবে নিজের প্রবৃত্তিকেই দেবতা করিয়া পূজা করা হয়। আমাদের লোভ, আমাদের হিংসা, আমাদের ক্ষুদ্রতাকে দেবতারূপে অমর করিয়া রাখি। এই কারণেই কালীকে দস্যু আপন দস্যুবৃত্তির সহায় বলিয়া জ্ঞান করে, মিথ্যা-শপথকারী আদালতে জয়লাভের জন্য পশু মানত করে, এমন-কি, যে-সকল অন্যায় অবিচার দুষ্কর্ম মনুষ্যলোকে গর্হিত বলিয়া খ্যাত দেবচরিত্রে তাহাও অনিন্দনীয় বলিয়া স্থান পায়।

 আমাদের দেশের দেবতা কি কেবল মূর্তিতেই বদ্ধ যে রূপক ভাঙিয়া তাহার মধ্যে আমরা ভাবের স্বাধীনতা লাভ করিব? চার হাতকে যেন আমরা চারিদিক্‌বর্তী কর্মশীলতা বলিয়া মনে করিলাম, কিন্তু পুরাণে-উপপুরাণে যাত্রায় কথকতায় তাহার জন্মমৃত্যুবিবাহ-রাগদ্বেষ-সুখদুঃখ-দৈন্যদুর্বলতার বিচিত্র পাঠ ও পাঠান্তর হইতে মনকে মুক্ত করিব কেমন করিয়া? যত প্রকার কৌশলে মানুষের মনকে ভুলাইয়া একেবারে আটে-ঘাটে বাঁধা যায় তাহার কোনোটারই ক্রটি নাই। এবং এতপ্রকার সুদৃঢ় স্থূল শৃঙ্খলে চতুর্দিক হইতে সযত্ন বন্ধনকে গ্রন্থকার যদি