পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
আধুনিক সাহিত্য

জুবেয়ার নিজের সম্বন্ধে বলেন, “‘যাহা জানিবার ইচ্ছা ছিল তাহা শিক্ষা করিতে বৃদ্ধবয়সে প্রয়োজন হইল, কিন্তু যাহা জানিয়াছি তাহা ভাললারূপে প্রকাশ করিতে যৌবনের প্রয়োজন অনুভব করি।’

 অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য চেষ্টাজাত অভিজ্ঞতা চাই, কিন্তু প্রকাশের জন্য নবীনতা আবশ্যক। লেখার বিষয়টির মধ্যে চিন্তার পরিচয় যত থাকে ততই তাহার গৌরব বাড়ে, কিন্তু রচনার মধ্যে চেষ্টার লক্ষণ যত অল্প থাকিবে তাহার প্রকাশশক্তি ততই অধিক হইবে।

 জুবেয়ার নিজে যে রচনাকলা অবলম্বন করিয়াছিলেন সে সম্বন্ধে বলিতেছেন, ‘তোমরা কথার ধ্বনির দ্বারা যে ফল পাইতে চাও আমি কথার অর্থ-দ্বারা সেই ফল ইচ্ছা করি; তোমরা কথার প্রাচুর্যের দ্বারা যাহা চাও আমি কথার নির্বাচনের দ্বারা তাহা চাই; তোমরা কথার সংগতির দ্বারা যাহা চাও আমি কথার পৃথকরণের দ্বারা তাহা লাভ করিতে প্রয়াসী। অথচ সংগতিও (harmony) ইচ্ছা করি, কিন্তু তাহা স্বভাবসিদ্ধ যথাযোগ সংগতি; জোড়া-গাথার নৈপুণ্যমাত্রের দ্বারা যে সংগতি রচিত তাহা চাই না।’

 বস্তুত প্রতিভাসম্পন্ন লেখক ও লিপিকুশল লেখকের প্রভেদ এই যে, একজনের রচনায় সংগতি এমন স্বাভাবিক এবং অখণ্ড যে তাহা বিশ্লেষণ করাই শক্ত, অপরের রচনায় সংগতি ইটের উপর ইটের ন্যায় গাঁথা ও সাজানো। প্রথমটি অজ্ঞাতসারে মুগ্ধ করে, দ্বিতীয়টি বিন্যাসনৈপুণ্যে বাহবা বলায়।

 তর্কযুদ্ধ সম্বন্ধে জুবেয়ার বলেন, তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজনীয়তা যতটুকু তাহার ঝঞ্ঝাট তদপেক্ষা অনেক বেশি। বিরোধ মাত্রেই চিত্তকে বধির করিয়া ফেলে। যেখানে অন্য সকলে বধির আমি সেখানে মুক।’

 জুবেয়ার বলেন, ‘কোনো কোনো চিত্ত নিজের জমিতে ফসল