পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
আধুনিক সাহিত্য

অধিক বলে, অথচ যেটি বলিবার নিতান্ত সেইটিই বলে; ভালো লেখায় একই কালে প্রচুর এবং পরিমিত, ছোটো এবং বড় মিশ্রিত থাকে। এক কথায় ইহার শব্দ সংক্ষিপ্ত, অর্থ অসীম।

 ‘অতিমাত্রায় ঠিকঠাকের ভাবটা ভালো নয়, কী সাহিত্যে কী আচরণে শ্রী রক্ষা করিয়া চলিতে গেলে এই নিয়ম স্মরণ রাখা আবশ্যক।

 ‘কোনো-কোনো রচনারীতির একপ্রকার পরিষ্কার খোলাখুলি ভাব আছে, লেখকের মেজাজ হইতে তাহার জন্ম। সেটা আমাদের ভালো লাগিতে পারে, কিন্তু সেটা চাইই চাই এমন কথা বলা যায় না।••• ভল্টেয়ারের লেখার এই গুণ, কিন্তু পুরাতন লেখকদের রচনায় ইহা দেখা যায় না। অতুলনীয় গ্রীক্‌ সাহিত্যের স্টাইলে সত্য সুষমা এবং সৌহার্দ্য ছিল, কিন্তু এই খোলাখুলি ভাবটা ছিল না। সৌন্দর্যের কতকগুলি মুখ্য উপাদানের সঙ্গে এই গুণটি ঠিক মিশে না। প্রবলতার সঙ্গে ইহার খাপ খাইতে পারে, কিন্তু মর্যাদার সঙ্গে নহে। এই গুণটির মধ্যে একপ্রকার সাহসিকতা ও স্পর্ধা আছে বটে, কিন্তু তেমনি ইহার মধ্যে একটা খাপছাড়া খিটখিটে ভাবও আছে।

 ‘যাহারা অর্ধেক বুঝিয়াই সন্তুষ্ট হয় তাহারা অর্ধেক প্রকাশ করিয়াই খুশি থাকে; এমনি করিয়াই দ্রুত রচনার উৎপত্তি।

 ‘নবীন লেখকেরা মনটাকে টহলায় বেশি, কিন্তু খোরাক অতি অল্পই দেয়।

 ‘কাচ যেমন, হয় দৃষ্টিকে সাহায্য করে নয় ঝাপ্‌সা করিয়া দেয়, কথা জিনিসটিও তেমনি।

 ‘এক প্রকারের কেতাবি স্টাইল আছে যাহার মধ্যে কাগজেরই গন্ধ পাওয়া যায়, বিশ্বসংসারের গন্ধ নাই; পদার্থের তত্ত্ব যাহার মধ্যে দুর্লভ, আছে কেবল লেখকিআনা।’

 বই জিনিসটা ভাব-প্রকাশ ও রক্ষার একটা আধারমাত্র। কিন্তু