পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
ডি প্রোফণ্ডিস।

টেনিসন এই কবিতাটিকে The Two Greetings কহিয়াছেন। অর্থাৎ ইহাতে তাঁহার সন্তানটিকে দুইভাবে তিনি সম্ভাষণ করিয়াছেন। প্রথমত তাঁহার নিজের সন্তান বলিয়া, দ্বিতীয়ত তাহার আপনাকে তফাত করিয়া। এক তাহার মর্তজীবন ধরিয়া, আর-এক তাহার চিরন্তন সত্তা ধরিয়া। একটিতে তাহাকে আংশিকভাবে দেখিয়া, আর-একটিতে তাঁহাকে সর্বতোভাবে দেখিয়া তাহার সন্তানের মধ্যে তিনি দুই ভাগ দেখিতে পাইয়াছেন; একটি ভাগকে তিনি স্নেহ করেন, আর-একটি ভাগকে তিনি ভক্তি করেন। প্রথম সম্ভাষণ স্নেহের সম্ভাষণ, দ্বিতীয় সম্ভাষণ ভক্তির।

 প্রথম ভাগ। প্রথম, শিশু জন্মিতেই তিনি ভাবিলেন এ কোথা হইতে আসিল। বৈদিক ঋষিকবিরা মহা অন্ধকারের রাজ্য হইতে, দিগন্তপ্রসারিত সমুদ্রগর্ভ হইতে তরুণ সূর্যকে উঠিতে দেখিয়া যেমন সসমে জিজ্ঞাসা করিতেন, ‘এ কোথা হইতে আসিল’, তেমনি সসম্ভ্রমে কবি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘এ কোথা হইতে আসিল’। তিনি দেখিলেন, এই শিশুটি যে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছে সেই পৃথিবীরই সহোদর। মহাসৌরজগতের যমজ ভ্রাতা। তিনি তাহাকে সম্ভাষণ করিয়া কহিলেন, ‘বৎস আমার, সেই মহাসমুদ্র, যেখানে যাহা-কিছু-ছিল’র মধ্যে যাহাকিছু-হইবে— অর্থাৎ অতীতের মধ্যে ভবিষ্যৎ কোটি-কোটি যুগযুগান্তর ধরিয়া অগণ্য আবর্তমান জ্যোতিঃপুঞ্জের মহামরুর মধ্যে ঘূর্ণমান হইতেছিল, তুমি সেইখান হইতে আসিতেছ। সেইখান হইতেই সূর্য আসিয়াছে, পৃথিবী ও চন্দ্র আসিয়াছে এবং তাহার অন্যান্য গ্রহসহোদবগণ আসিয়াছে। অতীতের সেই উষগর্ভে কবি প্রবেশ করিয়া দেখিলেন অপরিস্ফুট পৃথিবীর কারণপুঞ্জ যেখানে আবর্তিত হইতেছে