পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিহারীলাল
২৫

রাত্রির অন্ধকার যখন দূর হইতে থাকে তখন যেমন জগতের মূর্তি রেখায় রেখায় ফুটিয়া ওঠে, সেইরূপ অবােধবন্ধুর গদ্যে এবং পদ্যে যেন প্রতিভার প্রত্যুষকিরণে মূর্তির বিকাশ হইতে লাগিল। পাঠকের কল্পনার নিকটে একটি ভাবের দৃশ্য উদঘাটিত হইয়া গেল।—

‘সর্বদাই হু হু করে মন,
বিশ্ব যেন মরুর মতন
 চারি দিকে ঝালাফালা
 উঃ কী জলন্ত জ্বালা,
অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গপতন।’

 আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে এই প্রথম বােধ হয় কবির নিজের কথা। তৎসময়ে অথবা তৎপূর্বে মাইকেলের চতুর্দশপদীতে কবির আত্ম- নিবেদন কখনাে কখনাে প্রকাশ পাইয়া থাকিব—কিন্তু তাহা বিরল—এবং চতুর্দশপদীর সংক্ষিপ্ত পরিসরের মধ্যে আত্মকথা এমন কঠিন ও সংহত হইয়া আসে যে, তাহাতে বেদনার গীতােচ্ছাস তেমন স্ফুর্তি পায় না।

 বিহারীলাল তখনকার ইংরাজিভাষায় নব্যশিক্ষিত কবিদিগের ন্যায় যুদ্ধবর্ণনাসংকুল মহাকাব্য, উদ্দীপনাপূর্ণ দেশানুরাগমূলক কবিতা লিখিলেন না এবং পুরাতন কবিদিগের ন্যায় পৌরাণিক উপাখ্যানের দিকেও গেলেন না—তিনি নিভৃতে বসিয়া নিজের ছন্দে নিজের মনের কথা লখিিলেন। তাঁহার সেই স্বগত উক্তিতে বিশ্বহিত দেশহিত অথবা সভামনােরঞ্জনের কোনাে উদ্দেশ্য দেখা গেল না। এইজন্য তাহার সুর অন্তরঙ্গরূপে হৃদয়ে প্রবেশ করিয়া সহজেই পাঠকের বিশ্বাস আকর্ষণ করিয়া আনিল।

 পাঠকদিগকে, এইরূপে বিশ্রভাবে আপনার নিকট টানিয়া আনিবার ভাব প্রথম অবােধবন্ধুর গদ্যে এবং অবােধবন্ধুর কবি