পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
আনন্দ মঠ।

হইলে বিষ্ণুমন্দিরে আনিয়া বিগ্রহের পাদস্পর্শ করাইয়া তাহাদিগকে সন্তান করে। লোকে দেখিল সন্তানত্বে বিলক্ষণ লাভ আছে। বিশেষ মুসলমান-রাজ্যের অরাজকতায় ও অশাসনে সকলে মুসলমানের উপর বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। হিন্দুধর্ম্মের বিলোপে অনেক হিন্দুই হিন্দুত্ব স্থাপনের জন্য আগ্রহচিত্ত ছিল। অতএব দিনে দিনে সন্তানসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। দিনে দিনে শত শত, মাসে মাসে সহস্র সহস্র সন্তান আসিয়া ভবানন্দ জীবানন্দের পাদপদ্মে প্রণাম করিয়া দলবদ্ধ হইয়া দিগ্‌দিগন্তরে মুসলমানকে শাসন করিতে বাহির হইতে লাগিল। যেখানে রাজপুরুষ পায়, ধরিয়া মারপিট করে, কখন কখন প্রাণবধ করে, যেখানে সরকারী টাকা পায় লুটিয়া লইয়া ঘরে আনে, যেখানে মুসলমানের গ্রাম পায় দগ্ধ করিয়া ভস্মাবশেষ করে।

 তখন নগরের মহারাজাধিরাজের চৈতন্য হইল। সন্তানদিগের শাসনার্থে তিনি ভূরি ভূরি সৈন্য প্রেরণ করিতে লাগিলেন কিন্তু এখন সন্তানেরা দলবদ্ধ শস্ত্রযুক্ত এবং মহাদম্ভশালী। তাহাদিগের দর্পের সম্মুখে মুসলমান সৈন্য অগ্রসর হইতে পারে না। যদি অগ্রসর হয়, অমিতবলে সন্তানেরা তাহাদিগের উপর পড়িয়া তাহাদিগকে ছিন্ন ভিন্ন করিয়া হরিধ্বনি করিতে থাকে। যদি কখনও কোন সন্তানের দলকে যবনসৈনিকেরা পরাস্ত করে, তখনই আর এক দল সন্তান কোথা হইতে আসিয়া বিজেতাদিগের মাথা কাটিয়া ফেলিয়া দিয়া হরি হরি বলিতে বলিতে চলিয়া য়ায়। রাজা আসদ উলজমান বড় বিভ্রাটে পড়িলেন। অনেকগুলি গোলা, কামান, হাতী, ঘোড়া পাঠাইলেন, কিছুতেই সন্তানদিগের “জয় দগদীশ হরে” শব্দের নিবারণ নাই। আসদউলজমান দেখিলেন যে রাজ্যচ্যুত হই।