চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
১৩
কোথায় তুমি হে মধুসূদন!” সেই সময়ে ভয়ে, ভক্তির প্রগাঢ়তায়, ক্ষুধা তৃষ্ণার অবসাদে, কল্যাণী ক্রমে বাহ্যজ্ঞানশূন্য, আভ্যন্তরিক চৈতন্যময় হইয়া শুনিতে লাগিলেন, অন্তরীক্ষে স্বর্গীয় স্বরে গীত হইতেছে—
“হরে মুরারে মধুকৈটভারে!
গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ সৌরে!
হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”
কল্যাণী বাল্যকালাবধি পুরাণে শুনিয়াছিলেন যে, দেবর্ষি গগনপথে বীণাযন্ত্রে হরিনাম করিতে করিতে ভুবন ভ্রমণ করিয়া থাকেন; তাঁহার মনে সেই কল্পনা জাগরিত হইতে লাগিল। মনে মনে দেখিতে লাগিলেন, শুভ্রশরীর, শুভ্রকেশ, শুভ্রশ্মশ্রু, শুভ্রবসন, মহাশরীর মহামুনি বীণা হস্তে চন্দ্রালোকপ্রদীপ্ত নীলাকাশপথে গাইতেছেন,
“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”
ক্রমে গীত নিকটবর্তী হইতে লাগিল, আরও স্পষ্ট শুনিতে লাগিলেন,
“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”
ক্রমে আরও নিকট—আরও স্পষ্ট—
“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”
শেষে কল্যাণীর মাথার উপর বনস্থলী প্রতিধ্বনিত করিয়া গীত বাজিল,
“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”
কল্যাণী তখন নয়নোন্মীলন করিলেন। সেই অর্দ্ধস্ফুট বনান্ধকারবিমিশ্র চন্দ্ররশ্মিতে দেখিলেন, সম্মুখে সেই শুভ্রশরীর, শুভ্রকেশ, শুভ্রশ্মশ্রু, শুভ্রবসন ঋষিমূর্ত্তি! অন্যমনে তথাভূতচেতনে
১