পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
আনন্দ মঠ।

না, জগদীশ্বর জানেন, যে তাহার চক্ষে যে স্রোতঃ আসিয়াছিল, বহিলে তাহা জীবানন্দকে ভাসাইয়া দিত; কিন্তু সে তাহা বহিতে দিল না। জীবানন্দের হাত হাতে লইয়া বলিল, “ছি, কাঁদিও না; আমি জানি, তুমি আমার জন্য কাঁদিতেছ, আমার জন্য তুমি কাঁদিও না—তুমি যে প্রকারে আমাকে রাখিয়াছ, আমি তাহাতেই সুখী।”

 জীবানন্দ মাথা তুলিয়া চক্ষু মুছিয়া স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলেন,

 “শান্তি! তোমার এ শতগ্রন্থি মলিন বস্ত্র কেন? তোমার ত খাইবার পরিবার অভাব নাই।”

 শান্তি বলিল, “তোমার ধন, তোমারই জন্য আছে। আমি টাকা লইয়া কি করিতে হয় তাহা জানি না। যখন তুমি আসিবে, যখন তুমি আমাকে আবার গ্রহণ করিবে—”

 জীবা। গ্রহণ করিব—শান্তি! আমি কি তোমায় ত্যাগ করিয়াছি?

 শান্তি। ত্যাগ নহে—যবে তোমার ব্রত সাঙ্গ হইবে, যবে আবার আমায় ভালবাসিবে—

 কথা শেষ না হইতেই জীবানন্দ শান্তিকে গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া তাহার কাঁধে মাথা রাখিয়া অনেক্ষণ নীরব হইয়া রহিলেন। দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া শেষে বলিলেন,

 “কেন দেখা করিলাম!”

 শান্তি। কেন করিলে—তোমার ত ব্রত ভঙ্গ করিলে?

 জীবা। ব্রতভঙ্গ হউক—প্রায়শ্চিত্ত আছে। তাহার জন্য ভাবি না, কিন্তু তোমায় দেখিয়া ত আর ফিরিয়া যাইতে পারিতেছি না। আমি এই জন্য নিমাইকে বলিয়াছিলাম যে, দেখায় কাজ নাই। তোমায় দেখিলে আমি ফিরিতে পারি না। একদিকে