পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



চতুর্ব্বিংশ পরিচ্ছেদ।
৮৯

শান্তি ধনুক লইল, তার লইল, অবহেলে তাহাতে গুণ দিয়া, সত্যানন্দের চরণতলে ফেলিয়া দিল।

 সত্যানন্দ বিস্মিত, ভীত এবং স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বলিলেন, “একি! তুমি দেবী না মানবী?”

 শান্তি করযোড়ে বলিল, “আমি সামান্যা মানবী। কিন্তু আমি ব্রহ্মচারিণী।”

 সত্য। তাই বা কিসে? তুমি কি বালবিধবা? না বালবিধবারও এত বল হয় না, কেন না তাহারা একাহারী।

 শান্তি। আমি সধবা।

 সত্য। তোমার স্বামী নিরুদ্দিষ্ট?

 শান্তি। উদ্দিষ্ট। তাঁহার উদ্দেশেই আসিয়াছি।

 সহসা মেঘভাঙ্গা রৌদ্রের ন্যায় স্মৃতি সত্যানন্দের চিত্তকে প্রভাসিত করিল। তিনি বলিলেন, “মনে পড়িয়াছে, জীবানন্দের স্ত্রীর নাম শান্তি। তুমি কি জীবানন্দের ব্রাহ্মণী?”

 এবার জটাভারে নবীনানন্দ মুখ ঢাকিল। যেন কতকগুলা হাতীর শুঁড়, রাজীবরাজীর উপর পড়িল। সত্যানন্দ বলিতে লাগিলেন “কেন এ পাপাচার করিতে আসিলে?”

 শান্তি সহসা জটাভার পৃষ্ঠে বিক্ষিপ্ত করিয়া উন্নত মুখে বলিল,

 “পাপাচরণ কি প্রভু? পত্নী স্বামীর অনুসরণ করে সে কি পাপাচরণ? সন্তানধর্ম্মশাস্ত্র যদি একে পাপাচরণ বলে, তবে সন্তানধর্ম্ম অধর্ম্ম। আমি তাঁহার সহধর্ম্মিণী, তিনি ধর্ম্মাচরণে প্রবৃত্ত, আমি তাঁহার সঙ্গে ধর্ম্মাচরণ করিতে আসিয়াছি।”

 শান্তির তেজস্বিনী বাণী শুনিয়া, উন্নত গ্রীবা, স্ফীত বক্ষ, কম্পিত অধর এবং উজ্জ্বল তথচ অশ্রুপ্লুত চক্ষু দেখিয়া সত্যানন্দ প্রীত হইলেন। বলিলেন