চিকণ রকম রসকলির উপর খয়েরের টিপ কাটিয়া তৎকালপ্রচলিত ফুরফুরে কোঁকড়া কোঁকড়া কতকগুলি ঝাপটার গোছায় চাঁদমুখখানি ঢাকিয়া, শান্তি একটি সারঙ্গ হস্তে বৈষ্ণবীবেশে ইংরেজশিবিরে দর্শন দিল। দেখিয়া ভ্রমরকৃষ্ণশ্মশ্রুযুক্ত সিপাহীরা বড় মাতিয়া গেল। কেহ টপ্পা, কেহ গজল, কেহ শ্যামাবিষয়, কেহ কৃষ্ণবিষয়, ফরমাস করিয়া শুনিল। কেহ চাল দিল, কেহ ডাল দিল, কেহ মিষ্ট দিল, কেহ পয়সা দিল, কেহ সিকি দিল। বৈষ্ণবী তখন শিবিরের অবস্থা স্বচক্ষে সবিশেষ দেখিয়া, চলিয়া যায়; সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করিল, “আবার কবে আসিবে?” বৈষ্ণবী বলিল, “তা জানি না, আমার বাড়ী ঢের দূর।” সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করিল, “কত দুর?” বৈষ্ণবী বলিল, “আমার বাড়ী পদচিহ্নে।” এখন সেই দিন মেজর সাহেব পদচিহ্নের কিছু খবর লইতেছিলেন। এক জন সিপাহী তাহা জানিত। বৈষ্ণবীকে ডাকিয়া কাপ্তেন সাহেবের কাছে লইয়া গেল। কাপ্তেন সাহেব তাহাকে মেজর সাহেবের কাছে লইয়া গেল। মেজর সাহেবের কাছে গিয়া বৈষ্ণবী মধুর হাসি হাসিয়া, মর্ম্মভেদী কটাক্ষে সাহেবের মাথা ঘুরাইয়া দিয়া, খঞ্জনীতে আঘাত করিয়া গান ধরিল—
“ম্লেচ্ছনিবহনিধনে কলয়সি করবালম্।”
সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “টোমাড় বাড়ী —কোঠা বিবি?”
বিবি বলিল, “আমি বিবি নই, বৈষ্ণবী। বাড়ী পদচিহ্নে।”
সাহেব। Well that is Padsin—Padsin is it? হুঁয়া একটো গর হ্যায়?
বৈষ্ণবী বলিল, “ঘর?—কত ঘর আছে।”
সাহেব। গর নেই,—গর নেই,—গর,—গর—
শান্তি। সাহেব, তোমার মনের কথা বুঝেছি। গড়?
সাহেব। ইয়েস্ ইয়েস্, গর! গর!—হ্যায়?
শান্তি। গড় আছে। ভারি কেল্লা।
সাহেব। কেট্টে আড্মি?
শান্তি। গড়ে কত লোক থাকে? বিশ পঞ্চাশ হাজার।
সাহেব। নন্সেন্স্। একটো কেল্লেমে ডো চার হাজার রহে শক্তা। হুঁয়া পর আবি হ্যায়? ইয়া নিকেল গিয়া?
শান্তি। আবার নেকলাবে কোথা?
সাহেব। মেলামে—টোম কব আয়া হ্যায় হুঁয়াসে?