পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
আনন্দমঠ

 ভবা। এমন হাজার হাজার, ক্রমে আরও হবে।

 মহে। না হয় দশ বিশ হাজার হল, তাতে কি মুসলমানকে রাজ্যচু্যত করিতে পরিবে?

 ভব। পলাশীতে ইংরেজের ক জন ফৌজ ছিল?

 মহে। ইংরেজ আর বাঙ্গালীতে?

 ভবা। নয় কিসে? গায়ের জোরে কত হয়—গায়ে জিয়াদা জোর থাকিলে গোল কি জিয়াদা ছোটে?

 মহে। তবে ইংরেজ মুসলমানে এত তফাৎ কেন?

 ভবা। ধর, এক ইংরেজ প্রাণ গেলেও পলায় না, মুসলমান গা ঘামিলে পলায়— শরবৎ খুজিয়া বেড়ায়—ধর, তার পর, ইংরেজদের জিদ আছে—য ধরে, তা করে, মুসলমানের এলাকাড়ি। টাকার জন্য প্রাণ দেওয়া, তাও সিপাহীরা মাহিয়ানা পায় না। তার পর শেষ কথা সাহস—কামানের গোল এক জায়গায় বই দশ জায়গায় পড়বে না— স্বতরাং একটা গোলা দেখে ছশ জন পলাইবার দরকার নাই। কিন্তু একটা গোল দেখিলে মুসলমানের গোষ্ঠীশুদ্ধ পলায়—আর গোষ্ঠীশুদ্ধ গোল দেখিলে ত একটা ইংরেজ পলায় না।

 মহে। তোমাদের এ সব গুণ আছে?

 ভবা। না। কিন্তু গুণ গাছ থেকে পড়ে না। অভ্যাস করিতে হয়।

 মহে। তোমরা কি অভ্যাস কর?

 ভবা। দেখিতেছ না আমরা সন্ন্যাসী? আমাদের সন্ন্যাস এই অভ্যাসের জন্য। কার্য উদ্ধার হইলে—অভ্যাস সম্পূর্ণ হইলে—আমরা আবার গৃহী হইব। আমাদেরও স্ত্রী কন্যা আছে।

 মহে। তোমরা সে সকল ত্যাগ করিয়াছ—মায়া কাটাইতে পারিয়াছ?

 ভবা। সন্তানকে মিথ্যা কথা কহিতে নাই—তোমার কাছে মিথ্যা বড়াই করিব না। মায়া কাটাইতে পারে কে? যে বলে, আমি মায়া কাটাইয়াছি, হয় তার মায়া কখন ছিল না যা সে মিছা বড়াই করে। আমরা মায়া কাটাই না—আমরা ব্রত রক্ষা করি। তুমি সন্তান হইবে?

 মহে। আমার স্ত্রীকস্তার সংবাদ না পাইলে আমি কিছু বলিতে পারি না।

 ভবা। চল, তবে তোমার স্ত্রীকন্যাকে দেখিবে চল।