পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সত্যসন্ধ বিনায়ক
১৫১

দুসপ্তাহ পরে বিনায়ক আবার আমার কাছে এল। আগের মতন বড় দল সঙ্গে নেই, মোটে তিন জন এসেছে। জিজ্ঞাসা করলুম, খবর কি বিনায়ক, কাজ কেমন চলছে?

 বিনায়ক বললে, শাস্ত্রে আছে, শ্রেয়স্কর ব্যাপারে বহু বিঘ্ন, তা অতি ঠিক। আমাদের দলের সাত জন ভেগেছে।

 —বল কি! কোথায় গেল তারা?

 —দু জন চাকরি নিয়ে দশটা পাঁচটা আপিস করছে, তাদের ফুরসত নেই। দুটি ছেলে বাপের ধমকে ঠাণ্ডা হয়ে লেখাপড়ায় মন দিয়েছে। সেই বিনয় ছোকরা, মেয়েদের যে গান শেখাত, প্রেমে পড়েছে, তারও কিছুমাত্র ফুরসত নেই। আরও দু জন আপনার ভাবী বেয়াই মিস্টার রাধাকান্ত বাসু আর মুরুব্বী গিরধারীলাল পাচাড়ীর দালাল হয়ে শিঙে মুখে দিয়ে গর্জন করছে—ভোট দিন, ভোট দিন। সেদিন সন্ধ্যার সময় একটা গুণ্ডা এসে আমাকে শাসিয়ে গেছে।

 —খুব মুশকিলে পড়েছ দেখছি। খরচের জন্যে কিছু টাকা নেবে?

 —তা দিন, কিন্তু দান নয়, কর্জ। আপনি যদি আমাদের সংঘের সহযোগিতা করতেন তবেই দান নিতে পারতুম। টাকাটা যত শীঘ্র পারি শোধ করে দেব।

 —সে তো ভাল কথা, তোমার আত্মসম্মান বজায় থাকবে। কিন্তু দেশব্যাপী দুর্নীতি আর তার পোষক বড় বড় লোকদের সঙ্গে তুমি পেরে উঠবে কি করে? কোন্ দিন হয়তো গুণ্ডার হাতে প্রাণ হারাবে। আমি বলি কি, তোমার এই হোপলেস ব্রতটা ছেড়ে দাও। ভাল অথচ নিরাপদ সৎকার্য তো অনেক আছে, তারই একটা বেছে নাও—আর্তত্রাণ, রোগীর সেবা, গরিবের ছেলেমেয়ের শিক্ষা, পতিতার উদ্ধার—