পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

 অন্দরমহলে গিয়ে ত্রিক্রম আনন্দীবাঈকে শোবার ঘরে ডেকে আনালেন। আনন্দী বললেন, তিন দিন তোমার কোনও পাত্তা নেই, চেহারা খারাপ হয়ে গেছে, ব্যাপার কি, গভরমেণ্টের সঙ্গে আবার কিছু গড়বড় হয়েছে নাকি?

 ত্রিক্রমদাস মাথা হেট করে তাঁর গুপ্তকথা প্রকাশ করলেন। আনন্দী কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন, তার পর কোমরে হাত দিয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন, ক্যা বোলা তুম নে?

 শেঠজী একটু ভয় পেয়ে বললেন, আনন্দী, ঠাণ্ডা হো যাও, সব ঠিক হো জাগা।

 বাংলা সাহিত্য যতই সমৃদ্ধ আর উঁচুদরের হক, হিন্দী ভাষায় গালাগালির যে শব্দসম্ভার আছে তার তুলনা নেই। আনন্দীবাঈ হাত-পা ছুড়ে নাচতে লাগলেন, হোজ-পাইপ থেকে জলধারার মতন তাঁর মুখ থেকে যে ভর্ৎসনা নির্গত হতে লাগল তা যেমন তীব্র তেমনি মর্মস্পর্শী। তার সকল বাক্য ভদ্রজনের শ্রোতব্য নয়, ভদ্রনারীর উচ্চার্যও নয়, কিন্তু আনন্দীবাঈএর তখন হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। তিনি উত্তরোত্তর উত্তেজিত হচ্ছেন দেখে শেঠজী হাত জোড় করে আবার বললেন, আনন্দী, মাফ করো, সব ঠিক হো জাগা।

 আনন্দী গর্জন করে বললেন, চোপ রহো শড়ক কা কুত্তা, ডিরেন কা ছুছুন্দর! এই বলেই বাঘিনীর মতন লাফিয়ে গিয়ে শেঠজীর দুই গালে খামচে দিলেন। তার পর পিছু হটে তাঁর বাঁ হাত থেকে দশগাছা মোটা মোটা চুড়ি খুলে নিয়ে স্বামীর মস্তক লক্ষ্য করে ঝনঝন শব্দে নিক্ষেপ করলেন। শেঠজীর কপাল ফেটে রক্ত পড়তে লাগল, তিনি চিৎকার করে ধরাশায়ী হলেন। ততোধিক চিৎকার করে আনন্দীবাঈ তাঁর পুজোর ঘরে চলে গেলেন এবং মেঝেয় শুয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।