পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যযাতির জরা
১৫৯

 যযাতি কুণ্ঠিত হয়ে বললেন, হুঁ, আপনার আশঙ্কা যথার্থ। ওহে মন্ত্রী, এখনই ঘোষণা করে দাও—যাঁদের পত্নী জীবিত আছেন তাঁদের সঙ্গে আমি বয়স বিনিময় করব না। একটি করে স্বর্ণমুদ্রা প্রণামী স্বরূপ দিয়ে তাঁদের বিদায় কর।

 যাঁদের বাদ দেওয়া হল তাঁরা প্রণামী নিলেন, কিন্তু কেউ চলে গেলেন না, রাজা কাকে মনোনীত করেন দেখবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।

 যে পঙ্গু ব্রাহ্মণ ডুলিতে এসেছিলেন তিনি রাজার সম্মুখে এসে ডুলিতে বসেই বললেন, মহারাজের জয় হক। আমি মহাকুলীন বিপ্র কুলীরক, বয়স শত বর্ষ, সর্বশাস্ত্রজ্ঞ, আমার পাঁচ পত্নীই একে একে গত হয়েছেন। আমার তুল্য যোগ্যপাত্র কোথাও পাবেন না, অতএব আমার সঙ্গেই বয়স বিনিময় করুন।

 নমস্কার করে যযাতি বললেন, দ্বিজোত্তম কুলীরক, আমি জরা কামনা করি, কিন্তু পঙ্গুত্ব চাই না। মন্ত্রী, একে পাঁচ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বিদায় কর।

 তার পর এক বক্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধ তাঁর দুই পৌত্রের হাত ধরে যযাতির কাছে এসে বললেন, মহারাজ, আমার নাম কিঞ্চুলুক, কার্তবীর্যার্জুনের বংশধর, বয়স আশি। চোখে ভাল দেখতে পাই না, অগাধ বিদ্যাবুদ্ধির জন্য লোকে আমাকে প্রজ্ঞাচক্ষু বলে। বহু পুত্র পৌত্র সত্ত্বেও আমি অসুখী, সকলেই আমাকে অবহেলা করে, সম্পত্তির লোভে আমার মৃত্যুকামনা করে। আপনার পরিপক্ক যৌবন পেলে আমি পুনর্বার দারপরিগ্রহ করে সুখী হতে পারব।

 যযাতি বললেন, মহামতি কিঞ্চুলুক, আমি জরা চাই, কিন্তু আপনার প্রজ্ঞাচক্ষুতে আমার কাজ চলবে না। মন্ত্রী, পঞ্চ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে এঁকে বিদায় কর।