পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

ভগবান নাচার, সব সময় দয়া করলে তাঁর চলে না, তা বোঝেন? ইঁদুরকে যদি দয়া করেন তো বেড়াল উপোস করবে। মাছ মুরগি পাঁঠা ভেড়াকে দয়া করলে আপনার আমার পেটই ভরবে না। তিনি যখন মানুষকে দয়া করেন তখন মাইক্রোব ধ্বংস হয়, আবার মাইক্রোবকে দয়া করলে মানুষ মরে। নিজের হাত-পা বাঁধা বলেই ভগবান মানুষ সৃষ্টি করেছেন, বলেছেন —আমার হয়ে তোরাই যতটা পারিস দয়া করবি, মনে রাখিস অহিংসাই পরম ধর্ম। গল্প লিখছেন বলেই আপনি মানুষ খুন করবেন এ কি রকম কথা! সেকালে বাল্মীকি কালিদাস শেকস্পীয়ার কি লিখেছিলেন তা ভুলে যান। এটা হল গান্ধীজীর যুগ, বিয়োগান্ত রচনা একদম চলবে না। যারা ট্রাজেডি লেখে আর তা পড়তে ভালবাসে তারা মরবিড, প্রচ্ছন্ন নিষ্ঠুর। মানুষের তো দুঃখের অভাব নেই, তার ওপর আবার মনগড়া-দুঃখের কাহিনী চাপাবেন কেন? আনন্দের গল্প লিখুন, মানষকে আর কাঁদাবেন না, শুধু হাসাবেন। আপনাদের ভাবনা কি, কলমের আঁচড়েই তো সৃষ্টি স্থিতি লয় করতে পারেন। অলকাকে বাঁচাতেই হবে, বুঝলেন সিকদার মশাই? শারলক হোম্‌সকে কোনান ডয়েল মেরে ফেলেছিলেন, কিন্তু পাঠকদের ধমক খেয়ে আবার বাঁচিয়ে দিলেন। আপনিই বা বাঁচাবেন না কেন?

 উত্যক্ত হয়ে বটেশ্বর বললেন, মাপ করবেন ডাক্তার চ্যাটার্জি, আপনার সঙ্গে আমার মতের মিল হবে না। আমরা লে-ম্যান লেখকরা তো আপনাদের চিকিৎসায় হস্তক্ষেপ করি না, আপনারাই বা লেখকদের হুকুম করবেন কেন? অনধিকারচর্চা কোনও পক্ষেই ভাল নয়।

 সঞ্জীব ডাক্তার দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, আমি অনধিকারচর্চা করি না, ডাক্তারের কাজ প্রাণরক্ষা, আপনি খুন করতে যাচ্ছেন তাতে আপত্তি জানানো আমার কর্তব্য। বেশ, যা খুশি করুন, আপনার পরম ভক্ত