পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

 —নিশ্চয় পারবে, ট্রাজেডির নায়িকা সেজেও তো চমৎকার অভিনয় করা যায়।

 —তা হতেই পারে না, মরতে আমি মোটেই রাজী নই, অলকা সেজেও নয়। আপনি সব মাটি করে দিলেন দাদু, মিছেই এখানে এসে আপনাকে বিরক্ত করলুম। তা হলে চললুম, গল্পসরস্বতী দামোদর নশকরের সঙ্গেই কথা বলি গিয়ে। তাঁর ‘মানস-মরালী’ উপন্যাসটি অপূর্ব হয়েছে, তার নায়িকা মঞ্জুলার পার্টটিও আমার বেশ পছন্দ।

 বটেশ্বর চঞ্চল হয়ে উঠলেন। দিন কতক আগে ‘দুন্দুভি’ পত্রিকায় একটা গণ্ডমূর্খ সমালোচক লিখেছিল— দামোদর নশকরের গল্প যুগচেতনা সমাজচেতনা যৌনচেতনায় পরিপূর্ণ, বটেশ্বর সিকদারের রচনা একেবারে অচেতন, শুধু চর্বিতচর্বণ। এই সমালোচনা পড়ার পর থেকে দামোদরের নাম শুনলে বটেশ্বর খেপে ওঠেন। উত্তেজিত হয়ে হাত নেড়ে বললেন, খবরদার ওটার কাছে যেয়ো না। অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন, দু দিন সময় আমাকে দাও, ভেবে দেখি অলকাকে বাঁচিয়ে গল্পটি মিলনান্ত করা চলে কিনা।

 —ভাবনার যে সময় নেই দাদু। কালই আমি বোম্বাই চলে যাচ্ছি, আজকের মধ্যেই একটা হেস্তনেস্ত করে নেবুচাঁদজীকে জানাতে হবে।

 গালে হাত দিয়ে একটু ভেবে বটেশ্বর বললেন, আচ্ছা আচ্ছা, অলকাকে বাঁচিয়েই রাখব, শর্বরীই না হয় মরবে। অন্য কারও কাছে তোমাকে যেতে হবে না। জান কদম্বানিলা, আমরা গল্পলিখিয়েরা হচ্ছি সর্বশক্তিমান, কলমের খোঁচায় সৃষ্টি স্থিতি লয় করতে পারি।

 কদম্বানিলা উৎফুল্ল হয়ে বলল, থ্যাংক ইউ দাদু এই তো লক্ষ্মী ছেলের মতন কথা। দিন পায়ের ধূলো। গল্পটি কিন্তু বেশ ভাল করে শেষ করতে হবে, শেষ দৃশ্যে ছেলে কোলে করে অলকার আসা চাই। এখন চললুম, নেবুচাঁদজীকে সুখবরটা দিইগে।