পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুই সিংহ
৫৭

নির্দিষ্ট দিনে প্রীতিসম্মিলন বা টি-পার্টির আয়োজন হল। বাড়ির সামনের মাঠে শামিয়ানা খাটানো হয়েছে, ছোট ছোট টেবিলের চার পাশে চেয়ার সাজিয়ে নিমন্ত্রিতদের চা খাবার ব্যবস্থা হয়েছে। শামিয়ানার এক দিকে বেদীর উপর সভাপতি অনুকূল চৌধুরী, দুই সিংহ অর্থাৎ প্রধান অতিথি বটেশ্বর আর দামোদর,, রাজলক্ষ্মী দেবী, এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট লোক বসবেন। সভায় বক্তৃতা বিশেষ কিছু হবে না, শুধু বেচারাম অভ্যাগতদের স্বাগত জানাবেন, তার পর অনুকূল চৌধুরী গৃহস্বামীর কিঞ্চিৎ গুণকীর্তন করে তাঁর সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দেবেন। আশা আছে বটেশ্বর আর দামোদরও বেচারামের কৃতিত্ব আর বদান্যতা সম্বন্ধে কিছু বলবেন।

 সভাপতি এবং দুই সিংহের জন্যে তিনটি ভাল চেয়ার আনা হয়েছে, একটি মাইসোরের চন্দন কাঠের আর দুটি কাশ্মীরী আখরোট অর্থাৎ ওআলনট কাঠের। প্রথম চেয়ারটির পিছন দিকে একটু বেশী উঁচু আর নকশাদার, সেজন্যে খুব জাঁকালো দেখায়। কপোত গুহ একই রকম তিনটি চেয়ার আনবার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু যোগাড় করতে পারেন নি। শামিয়ানার নেপথ্যে চড়কডাঙা স্ট্রিংব্যাণ্ডের তিনজন বেহালাবাদক মোতায়েন আছে। তারা খুব আস্তে বাজাবে, যাতে অতিথিদের কথাবার্তার ব্যাঘাত না হয়।

 নিমন্ত্রিত লোকেরা ক্রমে ক্রমে এসে পৌঁছলেন। বেচারাম, তাঁর ছেলে-মেয়ে, এবং কপোত আর শিঞ্জিনী গৃহ অতিথিদের সমাদর করে বসিয়ে দিলেন। বেচারাম-গৃহিণী সুবালা কিছুতেই এই দলের মধ্যে থাকতে রাজী হলেন না, তিনি রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে ফিসফিস করে একটু আলাপ করেই সরে পড়লেন এবং মাঝে মাঝে উঁকি মেরে দেখতে লাগলেন। প্রায় সকলের শেষে বটেশ্বর সিকদার আর দামোদর নশকর উপস্থিত হলেন। দৈবক্রমে এঁদের আগমন এক সঙ্গেই হল, প্রত্যেকের